রংপুরে দিনের পর দিন বাড়ছে বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনা। বিষয়টি বেশ ভাবিয়ে তুলছে সুশীল সমাজকে। করোনাকালে এর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি বিবাহ -বিচ্ছেদ।
প্রতি মাসে দেড় শতাধিকের বেশি বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনপত্র জমা পড়ছে বলে জানা গেছে রংপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে।
মাসে গড়ে প্রায় ৭০রও বেশি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে।
গেল এক বছরে রংপুর সিটি করপোরেশনে এলাকায় সহস্রাধিক বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।
হরহামেশাই ঘটছে এ রকম ঘটনা। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে বিচ্ছেদের এ তকমায় এগিয়ে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা। রয়েছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যরাও। যাদের গড় বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর। রংপুর সিটি করপোরেশনের সাধারণ শাখা বরাত দিয়ে এই তথ্য জানা গেছে।
পরিসংখ্যান বলছে গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি জুন ক্লোজিং পর্যন্ত মহানগর এলাকার ৩৩ ওয়ার্ডে হাজার ছুঁই ছুঁই বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ।
মোট বিবাহ- বিচ্ছেদ ৯৬৪টি যা সচেতন মহল কে ভাবিয়ে তুলেছে। তালাক দেওয়ার তালিকায় নারীরা একধাপ এগিয়ে রয়েছেন।
আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে নারীরা এখন অনেক বেশি হারে তালাক দিচ্ছেন বলে জানান রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাইমুর হক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,সব চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেছবুক,ইমু মেসেঞ্জার,
মোবাইলে যোগাযোগে সংসার আলাদা হচ্ছে
পরকিয়ায় লিপ্তে বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে নারীরা বেশি,
তবে, এ বিষয়ে জানতে মানবাধিকার কর্মী একেএম সালাউদ্দিন কাসেম বলেন ফোনের অবাধে ব্যবহারে যোগাযোগ মাধ্যমে প্রলোভনে পরে,বিবাহ- বিচ্ছেদ বেশি ঘটছে। অন্যদিকে করোনা কালিন সময়ে অলসতায় মোবাইলে পন্নগ্রাফি ছবি দেখে অল্প বয়সের মেয়েরা বেশি ঝুঁকছে বিবাহর দিকে। পর্যায়ে তারা জৈবিক চাহিদা আগ্রহ প্রকাশ করছে অল্প বয়সেই। আর পরকীয়ায় অবহেলিত হচ্ছে তাদের ছেলে মেয়ে।যা ভাবিয়ে তুলেছে লেখক ও গবেষককে।
বিচ্ছেদের এই তালিকায় যৌতুক নিয়ে বিরোধ, পরিবারের অনুমতি ছাড়া বিয়ে, পালিয়ে বা প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে বিয়ে, কারো প্ররোচনায় পড়ে বিয়ে এবং অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করা ছেলে-মেয়েরা রয়েছে। যাদের বেশিরভাগই উঠতি বয়সের এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া। এছাড়াও বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ রয়েছেন।
তিনি বলেন , অবাধ স্বাধীনতা, ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, মাদকাসক্ত, পরকীয়া আসক্তি, স্বামী-স্ত্রীর মতামতের পার্থক্য, যৌতুক, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।
সবকিছুর মূলে যৌতুক, পরকীয়া, শারীরিক নির্যাতন, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়াটা বিচ্ছেদের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখছেন এই কাজী।
সঙ্গে ভারতীয় সিরিয়ালও সংসার জীবনে বিচ্ছেদের ঘটনায় নারী-পুরুষদের প্রভাবিত করছেন বলে দাবি তার। তিনি বলেন, অন্যান্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বিচ্ছেদের প্রবণতা বেড়েছে। এতে পুরুষদের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি।
গাইবান্ধা জেলা জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দিন দিন বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে। যদিও বিবাহবিচ্ছেদ রাষ্ট্রীয় আইন ও ব্যক্তিগত আইনসম্মত একটি পদ্ধতি। তবে এটি বেদনাদায়ক। এই চর্চার ব্যাপকতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে এটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী। তাই মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি কোন বিকল্প নেই। আর ছেলে মেয়ে মধ্যে কাউন্সিলিং তৈরি করতে হবে বুঝাতে হবে বিবাহ- বিচ্ছেদ সম্পর্কে। অল্প বয়সে বিবাহ সহ নানাবিধ সমস্যা গুলো তাহলেই কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব ।