ভয়াবহ করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে সাপ দিয়ে কালোযাদুর পাতা খেলার আয়োজন করে প্রায় ২৫-৩০ হাজার লোকের সমাগম করার অভিযোগ উঠেছে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজের ছোট ভাই সোহেল পারভেজের বিরুদ্ধে। করোনাকালে এমন খেলার আয়োজন আর প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় জেলা জুরে জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়ার টাইগার স্পোর্টিং ক্লাব গাইবান্ধা-বালাসি সড়ক সংলগ্ন এলকায় সাপ দিয়ে কালোযাদুর পাতা খেলার আয়োজনে এই জনসমাগম হয়। উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই সোহেল পারভেজের পৃষ্ঠপোষকতার পাতা খেলাটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওই উপজেলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ নিজেই। খেলোয়ারদের আকৃষ্ট করতে বিজয়ী তান্ত্রিকদের উপহার হিসেবে ঘোষনা করা হয় রঙ্গিন টেলিভিশন ও মোবাইল।
জানা গেছে, ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজের ছোট ভাই সোহেল পারভেজ আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। প্রার্থীতা প্রচার করতেই তারা সাপ দিয়ে কালোযাদুর পাতার এই আকার্ষণীয় খেলার আয়োজন করে। একদিকে সাপ দিয়ে কালোযাদুর আকর্ষণীয় পাতা খেলা অন্যদিকে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় খেলা দেখতে জেলার সাত উপজেলার নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ ও শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সের হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়।
এরআগে, গত কয়েকদিন ধরে পুরো উপজেলা জুড়ে মাইকিং করে খেলার প্রচার প্রচারণা চালানো হয়। সড়কের মোড়ে মোড়ে লাগানো হয় ফেস্টুন-ব্যানার। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকেও জানান দেওয়া হয় পাতা খেলার। খেলার এত প্রচার প্রচারণা সত্বেও আশঙ্কিত জনসমাবেশ বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি উপজেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ বিভাগ। শুধু তাই নয়, খেলাটি একাধিক ফেসবুক আইডি থেকে দীর্ঘক্ষণ লাইভ (সরাসরি) প্রচার করা হলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ বিভাগ কিংবা প্রশাসন।
তবে জনসমাগমে পাতা খেলার বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ বিভাগকে মুঠোফোনে জানানোর একঘন্টা বিলম্বে ওসি মানস চক্রবর্তীর নেতৃত্বে গোয়েন্দা বিভাগের একটি টিম সেখানে পৌঁছে। ততক্ষণে খেলা শেষ হয়ে যায়।
এদিকে, সারাদেশের ন্যায় গাইবান্ধাতেও বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে জেলায় কোভিটে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। আক্রান্তের হার ৩৪ শতাংশ। এছাড়া ভয়াবহ করোনার এই মহা দূর্যোগে সারদেশে সংক্রামন রোধ করাসহ ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরকার যখন কঠোর পরিশ্রম করছে, এমন সময় হাজার হাজার লোকের সমাগমে এই পাতা খেলার আয়োজন সত্যিই বিস্ময়কর ও আশঙ্কার বলে জানান স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। এর থেকে করোনা মহামারি রুপ নিতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
খেলা দেখতে আসা গিদারি ইউনিয়নের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘দেশে যখন করোনার মহামারি, তখন এমন খেলার আয়োজন করা সত্যিই নিন্দনীয়’। এছাড়া তিনি পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘গত বেশ কয়েকদিন এ খেলার প্রচার চালানো হয়েছে। প্রশাসন এটি বন্ধে কেন কোনো পদক্ষেপ নিলনা, এটি বড় বিস্ময়কর’।
পাতা খেলা বিষয়ে আয়োজক সোহেল পারভেজের সাথে মুঠোফনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে প্রধান অতিথি ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি জি এম সেলিম পারভেজ জানান, খেলাতো প্রতিদিন সবখানেই হয়, শুধু এখানে নয়। এত লোকের সমাগম হবে তা আমরা বুঝতে পারিনি। এছাড়া খেলার খবর মাইকিং করে প্রচারের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান। এসময় জনগণের চাপে খেলা বন্ধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান দোলন মুঠোফোনে বলেন, মদনেরপাড়ার টাইগার স্পোর্টিং ক্লাবের বিরুদ্ধে যথযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া দুঃখ প্রকাশ করে ইউএনও আরো বলেন, প্রচার-প্রচারনার বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি।