গাইবান্ধার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাসান আলী হত্যার প্রতিবাদে সদর থানার ওসি মাহাফুজার রহমানকে অপসারণ ও ৪দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ ৩১মে সোমবার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান করেছেন হাসান হত্যার প্রতিবাদী মঞ্চের নেতৃবৃন্দ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে শহরের ১নং রেল গেট থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করে হাসান হত্যার প্রতিবাদী মঞ্চ। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হাসান হত্যার প্রতিবাদী মঞ্চের সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম গোলাপ, সিপিবি জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মিহির ঘোষ, স্মারক লিপি পাঠ করেন জেলা এডভোকেট বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু। পরে আমিনুল ইসলাম গোলাপের নেতৃত্বে জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মারুফ মনা, সিপিবির সভাপতি মিহির ঘোষ ও এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু,গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলামের সাথে সাক্ষাৎ করে দাবী সম্বিলিত স্মারক লিপি প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, চলমান বছরের গত ৫ মার্চ জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলীকে অপহরণ করে গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানা। এরপর তাকে উদ্ধারের দাবিতে হাসানের স্ত্রী বিথী বেগম থানায় অভিযোগ করলে মাসুদের বাড়ি থেকে উদ্ধারের পর অপহৃত ব্যবসায়ী হাসান আলীকে আবারও অপহরণকারী মাসুদের জিম্মায় দেয় পুলিশ। টানা একমাস মাসুদের বাড়িতে আটক অবস্থায় থাকার পর গত ১০ এপ্রিল শনিবার মাসুদের বাড়ির টয়লেট থেকে ব্যবসায়ী হাসান আলীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর আগে মোবাইল থেকে ক্ষুদে বার্তায় হাসান আলী স্বজনদের জানান মাসুদ রানা তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করে এবং থানায় পুলিশের উপস্থিতিতে তার কাছ থেকে মিথ্যা অঙ্গীকার নেয়। ওই দিনই মাসুদকে আটক করে পুলিশ। পরদিন দলীয় পদ থেকে রোববার মাসুদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম বাদী হয়ে মাসুদ রানা, রুমেন হক খলিলুর রহমান বাবুকে আসামি করে সদর থানার দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ এনে সদর থানায় মামলায় করেন। ওই মামলায় মাসুদ রানাকে গ্রেফতার দেখিয়ে চারদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। অন্যদিকে ব্যবসায়ী হাসান আলীকে উদ্ধারের পর থানা থেকে অপহরণকারী মাসুদ রানার হাতে তুলে দেয়ার ঘটনায় পুলিশের সম্পৃক্ততা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাহাত গাওহারীকে আহবায়ক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খায়ের ও পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল লতিফকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। ওই কমিটি তদন্ত শেষে ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ঘটনার পরপরই হাসান আলী হত্যার বিচার দাবীতে ফুঁসে ওঠে গাইবান্ধার সর্বস্তরের মানুষ। মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। গঠন করা হয় হাসান হত্যা প্রতিবাদ মঞ্চ। এ মঞ্চের উদ্যোগে ব্যবসায়ি হাসান আলী হত্যার বিচার দায়িত্বে অবহেলার জন্য সদর থানার ওসি মাহাফুজার রহমানকে অপসারণ ও ৪ দফা দাবীতে আন্দোলন চলমান রয়েছে। এ দাবীতে আন্দোলন চলমান থাকার পরেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি বরাবরে দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।