গাইবান্ধা সদর উপজেলার পা হারানো বৃদ্ধ খিজির উদ্দিন (৭০)। এক পা হারিয়ে বৃদ্ধ বয়সেই তাকে টানতে হচ্ছে সংসারের বোঝা। তবে এক পা না থাকলেও দমে যাননি তিনি। বাড়িতে বসেই বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ।
তবে কুটির শিল্পের এসব উপকরণ বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চললেও আজ অবধি নিজের জন্য একটি হুইল চেয়ার কিনতে পারেননি তিনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার হুইল চেয়ার দেয়ার আশ্বাস দিলেও কেউ কথা রাখেনি। তবে হুইল চেয়ার না থাকলেও চলাচলের ভরসা একমাত্র নড়েবড়ে ষ্ট্রেচারটি।
খিজির উদ্দিনের বাড়ি সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের মৌজা মালিবাড়ি বর্মতট গ্রামে। চার ছেলে দুই মেয়ে সবার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় যে যার মত আলাদাভাবে করছেন জীবনযাপন। তাইও এ বয়সেও স্ত্রী রহিমা বেগমকে নিয়ে এক পায়েই টানতে হচ্ছে সংসারের বোঝা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিজ বাড়ির আঙিনায় বসে বাঁশের তৈরি গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহৃত ডালা, কুলা বানাচ্ছেন তিনি। স্ত্রী রহিমা বেগম তাকে কাজে সহযোগিতা করছেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বয়স অনেক হল। চোখেও দেখতে পারি না ঠিকমতো। কানেও কম শুনতে পাই।’
তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে বাঁশ দিয়ে ডালা, কুলা বানাই। দিনের মধ্যে তিন-চারটার বেশি বানাতে পারি না। তা বিক্রি করে সংসার চলে না। খেয়ে না খেয়ে বাঁচি আছি এভাবে।’
পা হারালেন কীভাবে এমন প্রশ্নে খিজির উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর আগে ডান পায়ে একটা ছোট ফুসকুড়ি (টিউমার) উঠে। পরে ফুসকুড়ি ধীরে ধীরে বড় হয়ে ঘা হয়। গ্রাম্য ডাক্তারসহ হাসপাতালে চিকিৎসা করেও ভাল হয়নি। এক সময় ঘা হাটুর নিচে চলে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে রংপুরে গিয়ে অপারেশন করে পা কেটে ফেলি। সেই থেকে বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় কাটে।’
তিনি বলেন, ‘পা হারানোর আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। তখন সংসারও ভাল চলতো। চার ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি রাজমিস্ত্রির কাজ করে। এখন নিজেই অসহায়। পা হারিয়ে বুঝেছি জীবনের বাস্তবতা।’
গত ১৫ বছরে একটা হুইল চেয়ারও কিনতে পারি নাই। চেয়ারম্যান মেম্বররা দিতে চায়! কিন্তু দেয় না বলেন খিজির উদ্দিন।
স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, ‘কষ্ট করে চলি বাবা। অভাবের শেষ নাই। হুইলচেয়ার কি দিয়ে কিনমো।’
এ বিষয়ে লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদল বলেন, ‘এই মুর্হূতে ইউনিয়ন পরিষদের কোন বরাদ্দ নাই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে হুইলচেয়ারের জন্য আবেদন করব।’