কেন গরিব সাহাবীদের মধ্যে একজন হযরত বেলাল আল হাবসী (রা.)?
-আলিফ রহমান
মদিনায় সবচেয়ে গরিব সাহাবীদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত বেলাল আল হাবসী (রা.)। যিনি ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন ছিলেন। ইথিওপিয়া থেকে ইসলামের সুশীতল ছোঁয়ায় এসে রাসুল (সা.) এর হাতে হাত রেখে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়েছেন। তিনি দেখতে ছিলেন কালো বর্ণের কিন্তু হৃদয়টা ছিল সাদা ধবধবে।
তিনি এতোটাই গরিব ছিলেন যে, তার শুধু লজ্জস্থান ঢাকার মতো একটা লুঙ্গি ছিল। এছাড়া সম্পদ বলতে আর কিছুই ছিল না তার।
সেই বেলাল (রা.)-কে ডেকে রাসূল (সা.) বললেন, ”হে বেলাল! তুমি আল্লাহর রাস্তায় দান করো। হে বেলাল! আল্লাহর ধনভান্ডারে কোন কিছুর কমতি নেই। তুমি দান করো আল্লাহ তোমাকে আরো বাড়িয়ে দিবেন।” (শুআবুল ঈমান-১৩৯৩)
ভাবতে পারেন? যে বেলাল (রা.)-এর একটি লুঙ্গি ব্যতিত আর কোন কিছুই ছিল না, লুঙ্গিটা ছিল তার একমাত্র সম্পদ। সেই বেলাল (রা.)-কেই রাসূল (সা.) বলেছেন, ”দান করো বেলাল, কৃপণতা করো না। যে রবের সন্তুষ্টির জন্য তুমি দান করবা, সেই রবের কোন কমতি নাই, কোন কিছুর ঘার্তি নাই।”
গোটা বিশ্বের সবার সকল চাহিদা পূরণ করে দিলেও মহান আল্লাহর ধনভান্ডারে এক ইঞ্চিও কমবে না। এই জন্য মোত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সুখে-দুঃখে সব সময় আল্লাহর খুশির জন্য দান করা। কারণ দান করলেই আল্লাহ বাড়িয়ে দিবেন।
”যারা আল্লাহ রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মতো যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত সুবিজ্ঞ।” (সূরা বাকারা-২৬১)
আপনি যা দান করবেন, আল্লাহ তায়ালা তা শতগুন বৃদ্ধি করে দিবেন। (সুবহানআল্লাহ) আল্লাহর প্রাচুর্যতার কোনো কমতি নেই। এই জন্য বেশির থেকে বেশি দান করতে হবে। দান করলে বৃদ্ধি পাবে আর দান না করলে উল্টো আরো কমে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ”হে বনি আদম! তুমি দান করো। কারণ তুমি দান করলে আমিও দিবো।” (সূরা বাকারা-২৬১)
একটু ভাবুন, আপনার দু’হাতে ২ কেজি ওজনের দু’টি ব্যাগ রয়েছে এবং সামনে ১০ কেজি ওজনের একটি ব্যাগ রয়েছে। আপনি ২ কেজি ওজনের ব্যাগ দু’টা হাত থেকে রেখে দিলে তবেই না ১০ কেজি ওজনের ব্যাগটা নিতে পারবেন। একটা রেখে দিলে তবেই না আরেকটার নাগাল পাবেন।
সাধারণত গোপনে দান করা উত্তম। তবে প্রকাশ্যে দান করলেও আল্লাহ কবুল করেন। প্রকাশ্যে দান করা জায়েজ কিন্তু আল্লাহ বেশি খুশি হন গোপনে দান করলে। ’গোপন দান’ আল্লাহর ক্রোধ কমিয়ে দেন।
কিয়ামতের দিন আরশের ছায়া ব্যতিত আর কোন ছায়া থাকবে না। সেদিন ৭ (সাত) শ্রেণীর ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা আরশের নিচে ছায়া দিবেন। এর মধ্যে একশ্রেণীর ব্যক্তি তারা, যারা গোপনে দান করে।
গোপন দান কতোটা গোপনে হতে হবে? এ বিষয়ে হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ”এমন ভাবে দান করো যাতে এক হাতে দান করলে অপর হাতে বুঝতে না পারে।” তার মানে আমাদেরকে অনেক গোপনে দান করতে হবে।
সর্ব অবস্থায় দান করতে হবে। সুখের সময় যেমন দান করবো, তেমনি দুঃখের সময়ও দান করবো। সামর্থ অনুযায়ী দান করবো। দানের ধারাবাহিকতা চালিয়ে যেতে হবে ইনশাআল্লাহ।
একজন অসহায় এসে আপনার থেকে সাহায্য চাচ্ছে, তখন যে আপনি তাকে সাহায্য করতে পারছেন এই তাওফীক আপনাকে কে দিলো বলুনতো? নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দান করার তৌফিক দান করেন।
একবারো কি ভেবে দেখেছেন আল্লাহ তায়ালা চাইলেই চিত্রটা উল্টো হতে পারতো? আপনার সামনে সাহায্যের আবেদনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি হতে পারতো সমর্থ্যবান এবং আপনি হতে পারতেন অসহায় একব্যক্তি যে কিনা, একবেলা খাবারের আশায় হাত পেতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
-আলিফ রহমান