মহামারী করোনাভাইরাস এর কারণে দেশব্যাপী চলছে লকডাউন। এতে করে বন্ধ রয়েছে সারাদেশের ন্যায় গাইবান্ধার দোকানপাঠ ও শপিংমল। হুমকির মুখে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। টানা বন্ধের কারনে গতবছরের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি তারা। গতবছরে কয়েক লক্ষাধিক টাকা লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা। আবার এবছরও সেই ক্ষতির মুখে।
গতবছর করোনায় সরকার থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য লোন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। কিছু কিছু ব্যাংক কোটিপতিদের কে লোন দিয়েছে কিন্তু খুদে ব্যবসায়ীরা তা পায়নি।
করনায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অর্থ উপার্জন না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ব্যবসায়ীরা। আবার অনেকে ধার দেনা ও সুদের উপর টাকা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন জোগাচ্ছে তারা। দোকান খুলে না দেয়া হলে দেনার টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তারা। মায়াময়ী মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট সীমিত পরিসরে দোকান খুলে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা।
প্রকাশ- করনা ভাইরাসের কারনে দেশব্যাপী আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আর এ কারণে সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ১৪ এপ্রিল থেকে একসপ্তাহের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়। মাঝে ১২ ও ১৩ এপ্রিলকেও প্রথম দফা লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল শুরু হওয়া একসপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আরও একসপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আর এতেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গাইবান্ধার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কপালে। তারা বলছেন, সামনে ঈদ। সারাবছর কেনাকাটা যাই হোক, ঈদের সময় তা পুষিয়ে নেওয়া যায়। করনায় গতো বছর সহ এবছর পহেলা বৈশাখে তেমন মুনাফা অর্জন করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। হয়ে যাওয়া পহেলা বৈশাখ ও সামনে ঈদ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে অনেকে প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন তারা। ঈদ উপলক্ষে তারা ভালো বিক্রির আশা করছেন। কিন্তু চলমান টানা লকডাউনে ব্যবসায়ে ধ্বস নামার আশঙ্কা করেছেন ব্যবসায়ীরা।
যদিও ২৫ এপ্রিল থেকে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকান, শপিংমল খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দোকান। ঈদের আগে কতদিন খুলে রাখা যাবে এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা। তারা লকডাউনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সীমিত পরিসরে দোকান, শপিংমল খোলা রাখার দাবী জানিয়েছেন।
” গাইবান্ধা শহরের নতুন বাজার সংলগ্ন ইসলাম প্লাজার রেডিমেড কাপড়ের দোকান আজিম কালেকশন এর প্রোপাইটর রুহুল আমিন মোল্লা” জানান- গতবছর করনায় ৪ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। দেনার মধ্যে আছি। এইবার ঈদের একটা সিজিন। এই সিজিনে পরিশোধ করার চিন্তা থাকলেও তা তারা করতে পারছেনা। এই বার দেনায় পড়লে ব্যবসা ছেড়ে পালাতে হবে। আমরা ছোটো ব্যবসায়ী। কোটি টাকার ব্যবসায়ী না, যে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো। কারো কাছে চেতে পারিনা। আমার মত অসহায় লোক কার কাছে যাবে। হাউলাদ, দেনা ও সুদের উপর টাকা নিয়ে টুকটাক চালাচ্ছি সংসার। পরিচিত কেউ আসলে বিক্রি করি না আসলে বিক্রি হয়না।
প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাদের ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত দোকান খোলার অনুমতি দেয়া হোক। এতে করে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার পাশাপাশি পরিবারের মুখে অন্ন জোগাতে পারবো। না হলে অভুক্ত থেকে মরতে হবে। গতবছর করোনায় সরকার থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য লোন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।কিছু কিছু ব্যাংক কোটিপতিদের কে লোন দিয়েছে কিন্তু খুদে ব্যবসায়ীরা তা পায়নি।
“অন্যদিকে ইসলাম প্লাজার রেডিমেট কাপড় ব্যবসায়ী পোর্ট কালেকশনের প্রোপাইটর রনী সরকার” জানান-গত বছর করনার মধ্যে মানুষ ভয় ভীতির মধ্যে ছিল। সে পেক্ষাপটে মানুষের সচেতনতা ছিল। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ছিল ভয়ঙ্কর। কিন্তু এ বছর মানুষের মধ্যে কোনো ভিতি নেই। সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত পরিসরে খুলে দেয়ার প্রার্থনা করেন। কিছুদিন আগেও সুদের টাকার জন্য গাইবান্ধার এক জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলী হত্যা হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন- আপনি একজন মায়াময়ী মা। সীমিত পরিসরে খুলে দিলে ব্যবসায়ীরা বাচবে। না হলে বাচবে না। আমরা আপনার সন্তান। আপনি আমাদের দেখবেন বলে আশা করছি।
বিডি গাইবান্ধা/