ছোট গল্প
গল্প “আমি আমাকে খুঁজি!
আহসান কারিব প্রধান
এতো মানুষের ভির, সবাই হাটছে। মানুষের অতো বেশি তারা নেই, তবুও কচ্ছপে গতিতে ছুটছে সবাই। সবার মাঝে যাচ্ছি যাব ভাব , মনে হয় সবাই আড্ডা মারার যাচ্ছে , মনে হয় নয় সত্যি তাই। আমি যাচ্ছি বিজয় সরনী থেকে সংসদ ভবনের দিকে, প্রতিদিন নিয়মিত এখানে আসি। এখানে আসলে বিভিন্ন রকম জীবনের শেষ গন্তব্য দেখতে পাই। কেউ যে আসে নেহাত আড্ডা মারার জন্য তাদের সংখ্যাটা কম নয়। কম সংখ্যক লোক আসে প্রয়োজনিও কাজে, এমনো আছে যে কেনো আসে এখানে সে নিজেও যানে না। আর কেউ আসে জীবিকা নির্বাহের আপ্রাণ চেষ্টা করার জন্য, তার ছবিটা দেখা যায়, সংসদ ভবনের গেইট এর বাম পাশে নিস্পাপ চাহুনি নিয়ে ভার মুখে কয়েকটা টিশার্ট নিয়ে দারিয়ে থাকে একটা ১৩-১৪ বছরের ছেলে, যার সাথে সুযোগ পেলেই কথা বলতে চেষ্টা করি। তাদের কেও চিনি যারা সবার ঘৃনার পাত্র হয়ে ব্যাস্ত থাকে খদ্দের খোজার চেষ্টায়। আর ঐ যে গাছটার পেছনে অন্ধকার অংশে পেছন ফিরে বসে আছে, আমি নিশ্চিত জানি ওর কাছে উইড আছে। এখানে অবাক করা বিষয় হলো সবাই তাদের উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছে। আর শুধুই আমিই আসি এদের দেখতে, এদের সাথে কথা বলতে এবং জানতে৷ আজকেও এর সাথে ধাক্কা ওর সাথে ধাক্কা খেয়ে সংসদ ভবনের সামনে এগিয়ে গিয়ে একটা গাছের নিছে পৌঁছে বসে পরলাম ইটের গাথুনির উপর।।।
আমার সামনের দিকে ভ্রাম্যমান খাবারের দোকান, দুইটা টিনএজার দারিয়ে একে ওপরের সাথে খুব একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে একটু উচ্চস্বরে কথা বলছে। আমার একটা খারাপ অভ্যাস আছে, এখানে আসলেই চোখ অন্যদিকে দিয়ে থাকি ঠিকই, কিন্তু কানটাকে সজাগ রাখি, কে কি বলাবলি করছে তা শোনার জন্য। । সম্ভবত খুনসুটিটা হচ্ছে খাবার টা নিয়ে,,,,,,
মেয়েটা ছেলেটাকে একটু আদরের ভঙ্গিতে খাইয়ে দিতে চাচ্ছে, আর ছেলেটা বার বার এদিক সেদিক দেখে নিচ্ছে কেউ দেখছে ওদের দিকে। চোখ ঘুরাইতে চোখ আটকে গেলো আমার চোখে,,,
আমি দেখছি ওদের, ওরা যে পাশ দারিয়ে আছে আমি ঠিক উল্টো দিকে বসে আছি। ছেলেটা আমাকে দেখতে পারলেও মেয়েটা তা মেয়ে টা আমাকে মোটেও দেখতে পায়নি,,,,
আমার চোখে চোখ পরাতে আমি চোখ দিয়ে ইশারা করলাম,,,,,,
কি ব্যাপার টাইপের,
চেলেটা এবার খুব লজ্জা পাইছে মনে হয়। কারন এদিক সেদিক না তাকিয়ে কপালে হাত রেখে ঝুকে লজ্জা পাইছে জানিয়ে দিলো,,,,
এদের আমি চিনি, আরো একবার এদের সাথে দেখা হয়েছে আসাদ গেইট এ আড়ং এর শোরুম এ,,,, সেবার আমি মাস্ক পরা অবস্থায়,,এবারো তাই,,,,,
মেয়েটা ছেলেটা এই ভংগি দেখে পিছন ঘুরে আমার দিকে দেখে,
আমাকে পুরো এরিয়ে আবার ওর দিকে বললো শুধু একবার,,,,।
ছেলেটা দেখছে আমার দিকে,
এবার আমি মাথা এমন ভাবে ঘুরালাম যেনো অনুমতি দিলাম,, খাও একবার,,,,।
হটাৎ মেয়েটার মোবাইল ফোন বেজে উঠল,
হ্যালো আম্মু,,, হ্যালো,,, বলে নারকেল গাছের মতো গাছের দিকে সরে গেলো,,
এবার ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে আসলো,,,,, চোখে খুব একটা নিরীহ ভাব, যেন কিছুই বুঝেনা,,,,,,
অবাক করা বিষয় হলো ও আমাকে এসে বললো,,,,,,
– এত বুঝাই বুঝেনা,,,,
– হুম,,, আরে পাগলা এই সময়।
– না ব্যাপার ঠিক তা নয়।
– ব্যাপার ঐটাই যাও যাও, রাগ করবে,,
– ওকে বাসায় দিয়ে আসি,, রাত হচ্ছে,
– ভালো,,,,
– কিছু না মনে করলে আপনার ফোন নাম্বার পেতে পারি,,!!
– ক্যান ,,,?
– ভাল্লাগছে আপনার ব্যাবহার,,,
– ধুর পাগল,,,,,
– বিশেষ করে আড়ং এর ব্যাপারটা,,,,
ব্যাপারটা আর কিছুই না, এ আড়ং ঢুকবে, এর কাছে মাস্ক নাই,,,,
এর এখনেই ঢুকতেই হবে গার্ড ঢুকতে দেবেনা মাস্ক ছাড়া,,,,। এটা দেখে আমি নিজে থেকেই বিনা বাক্য ব্যায়ে, ব্যাগ থেকে একটা ওয়ান টাইম মাস্ক বের করে দিয়েছিলাম।
-আমি অলিখ,
-ওকে,,,,
-ধন্যবাদ,,,,, ভাইয়া বলে ঢুকে পরলো।
আমিও পিছে পিছে যেতে হলো,, সেটা অবশ্য ওকে ফলো করতে নয়, আমার দরকারে,,,,,,
পরে দেখি ভিতরে ক্যাপল হয়ে গেছে,,,,,
আমি মনে মনে একটু হাসলাম,, বুঝতে বাকি থাকলো না, তার তারা কেনো এতো বেশি ছিলো।
আসলে এর চাহুনি, কথা বলার ভঙ্গিটা আমারেই মতো, যখন আমার বয়স ১৬ ছিলো। বর্তমানে আমার ছটুর মতো,,, তাই মাস্ক টা দিয়েছিলাম, মেয়েটাকে চখের ইশারা দেখিয়ে বললাম
-ভালোবাসিস,,,,,
– খুব,,,,,,
-নাম কি,,?
– ঊষা,,,,,
– পারফেক্ট জুটি,,,
ছেলেটা আমাকে জরিয়ে ধরতে যাচ্ছিলো,
– এই এই,,,,,,
– ভাইয়া আপনি আসলেই অন্য রকম,,,,,
– আমি এমনই,,,
– ভাইয়া আপনার নাম কি,,,?
– শ্রাবন,,,,
বাসা কই আমি জিজ্ঞেস করলাম,,,,,
– বনানী,,,,
-(এবার নাম্বার টা দিয়ে বললাম)
আমারে আশে পাশে দেখতে পাবি। মারা না গেলে, হসপিটালাইজ না হলেে এখানেই পাবি এই গাটার নিচে।
মেয়েটার কথা বলা শেষ করে ওর দিকে তাকালো,
আমি আবার চোখের ইশারায় বললাম,, এবার তুমি যাও।
চলে গেলো,,,,
আমি এখানে আসলেই, চায়ের দোকান পিচ্ছি ছেলেটা একটা রং চা, আর সিগারেট এনে দ্যায়, বলতে হয়না আজকেও দিলো,,,,
কয়েকদিন কেটে গেলো, হটাৎ ফোনটা বেজে উঠল,,,
– হ্যালো ভাইয়া, আমি অলিখ, কেমন আছেন।
– ভালো,,,,
-তুই ,,,,,
– ভালো,,,,,,
– তো,,,, কি মনে করে,,,,,
– ভাইয়া ইভান ভাইয়ের বই টা নিয়েছেন কি? চলেন যাই বই মেলায়,,,
– তুই কেমনে জানিস!!! আমি ইভান ভাইয়ের ভক্ত,,?
– আপনার ফোনের ওয়ালপেপার থেকে,,,,,
এই কথার শেষ নেই,, আমি আমার বৈশিষ্ট্যের অনেক কিছু পেয়েছি। এখন আমি ওকে গাইড করি, যাতে আমার মতো ওকেও পস্তাতে না হয়, ওর বয়েসে আমার সাথে যা হয়েছিল তার জন্য। আমার পবিত্র আত্মার একটা পরিবার আছে, তার সদস্যে পরিণত হয়েছে অলিখ।
প্রতেকটা প্রেমের গল্প পবিত্র হয়, এই পবিত্র গল্পটা আমারো জীবনে ঘটেছিলে ভিন্ন গল্পে ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন ঠিকানায়। মানুষ মন অপবিত্র হয়, কিন্ত প্রেম কখনো অপবিত্র হয় না। অলিখদের সাথে রক্তের সম্পর্ক নেই, কিন্তু আত্মার সম্পর্ক হয়ে গেছে। রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন হয়, আত্মার সম্পর্ক ছিন্ন হয় না। আমি যার মাঝে হারানো আমিটাকে দেখি, তাদের একাকটাকে আমার কোলোন মনে হয়। চিরদিন থাকবে এই আত্মার সম্পর্ক।