হঠাৎ করেই দমকা ও ঝড় হাওয়ায় গাইবান্ধা সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড গতির বাতাসে কাচা-পাকা ঘর ভেঙে পড়াসহ উড়ে গেছে টিনের চালা। এছাড়া আমের মুকুল, লিচু ও উড়তি জমির আমন ধানের গাছসহ বিভিন্ন জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও গাছ ভেঙে সড়কের ওপরে পড়ায় যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
এদিকে, প্রচণ্ড বাতাসে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও পলাশবাড়ি উপজেলাতে দুই নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে পলাশবাড়িতে বেতকাপা ইউনিয়নের মোস্তাফুর ও ডাকেরপাড়া গ্রামে গোফফার রহমান এবং জাহানারা বেগমসহ দুইজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ময়না বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ময়না বেগম ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের দোয়ারা গ্রামের ছোলায়মান মিয়ার স্ত্রী।
রবিবার বিকেল ৩টার দিকে হঠাৎ করে গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলাতে শুরু হয় ঝড় বাতাস। বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে দমকা বাতাস। সেই সঙ্গে কোন কোন এলাকাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাতের খবরও পাওয়া গেছে। বাতাসের পর পরেই বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বৈশাখের শুরুতেই হঠাৎ করে জেলাজুড়েই শুরু হওয়া ধমকা হাওয়া আর কাল বৈশাখীর থাবায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মানুষ। পথঘাট ও শহর-বন্দরে থাকা মানুষও পড়েন ভয়-আতঙ্ক আর বিপাকে। হঠাৎ বয়ে যাওয়া এমন ঝড় হাওয়াকে প্রকৃতির আশনি সংকেত বা বড় ধরনের কাল বৈশাখীর ঝড়ের আশষ্কা করছে জেলার মানুষ।
ঝড়ো হাওয়ার পর সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার স্টেশন রোড, ট্রাফিক মোড়, বাংলাবাজারসহ শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও পাড়া মহল্লায় প্রবাহিত হয় দমকা হাওয়া। এতে এসব এলাকার অনেক কাচা-পাকা টিনের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়াসহ টিনের চালা উড়ে গেছে। ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে বসতবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন সড়কের দুই পাশের ছোট-বড় বেশকিছু গাছপালা। এছাড়া হাসেমবাজার এলাকায় একটি বিদ্যুতের খুঁটিও ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে।
একই অবস্থা দেখা গেছে সাদুল্লাপুর উপজেলাতেও। প্রচন্ড গতির বাতাস আর গুড়ি বৃষ্টির কারণে উপজেলা শহর, কাজিবাড়ি, জয়েনপুর, জামুডাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্য কাচা ঘরবাড়ি আর গাছপাল সড়কে উপড়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমের মুকুল, উঠতি জমির ধানের গাছসহ জমির বিভিন্ন ফসলের। ঘণ্টাব্যাপী ধরে চলা এই ঝড় বাতাসে সাদুল্লাপুর ভূমি অফিসের প্রধান গেটে একটি বড় ইউক্লিপটস গাছও ভেঙে পড়েছে। এতে সাদুল্লাপুর-নলডাঙ্গা পুরাতন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, হঠাৎ করেই জেলায় বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় কোথাও কোথাও কিছু বাড়িঘর ও গাছপালা ভেঙে পড়াসহ বিভিন্ন এলাকার ধানের জমি এবং ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বাতাসে গাছ ভেঙে পড়ায় সুন্দরগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলাতে দুই নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজা টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। বাতাসে বিভিন্ন সড়কে ভেঙে পড়া গাছ অপসারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন। তবে তাৎক্ষণিক ভাবে তিনি ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানাতে পারেননি।
বিডি গাইবান্ধা /জিল্লুর রহমান পলাশ