আর্থিক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচরণের দায়ে সম্প্রতি বিভাগীয় মামলা ও লঘুদণ্ড হিসেবে বেতন গ্রেড কমলেও স্বভাব বদলায়নি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকারের। সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় টানা পাঁচ বছর দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করা পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে দুদকসহ পাঁচটি মামলা হয়েছিল। দুর্নীতির দায়ে গত বছরের ৯ মার্চ অধিদপ্তর থেকে নুরুন্নবীকে বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয় রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলাতে। বদলির এক বছরে বাঘাইছড়িতেও প্রকল্পের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্য ছাড়াও অসদাচরণসহ নানা বির্তক কর্মকাণ্ডে জড়িতের অভিযোগ উঠেছে সরকারী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি বাঘাইছড়িতে নিজ কার্যালয়ে বসে জনসম্মুখে ধুমপান করার একটি ভিডিও হাতে এসেছে বিডি গাইবান্ধা ডট নিউজের। এই ধরনের অসদাচরণের আরও একটি ভিডিও সুন্দরগঞ্জেও পাওয়া যায় তার। আর এই কারণে তাকে শাস্তি পেতে হয়েছিল অধিদপ্তর থেকে। তবে শাস্তি কিংবা দণ্ড কোনটারই তোয়াক্কা না করে সম্প্রতি সরকারি অফিসে বসে তার এমন ধুমপানের দৃশ্যে হতবাক বাঘাইছড়িবাসী।
একই সাথে পিআইও নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপকারী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সমর বিজয় চাকমার হত্যার নেপথ্যে ছিলেন পিআইও; অভিযোগ নিহতের পরিবারের। নিহত সমর বিজয় চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা-সংস্কারবাদী) গ্রুপের বাঘাইছড়ি থানার স্কুলবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
এর আগে, সুন্দরগঞ্জে যোগদানের পর থেকেই সহকর্মীদের সাথে অসদাচরণ ও শারীরিক নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ উঠে পিআইও নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে। এছাড়া গত ১৪ মার্চ বাঘাইছড়ি উপজেলা মিলনায়তনের সামনে অর্ধশতাধিক মানুষের সামনে দিনদুপুরে তার কার্যালয়ের একজন অফিস সহায়ককে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে আবারও তার বিরুদ্ধে। তার এমন কর্মকাণ্ডে হতাশ উপজেলার সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বাঘাইছড়ির বাসিন্দারা।
গত ১৪ মার্চ জনসম্মুখে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক কুতুম চাকমা। তিনি বিডি গাইবান্ধা ডট নিউজকে বলেন, ‘দাদা! আমি কি বলবো। জিনিসটা হচ্ছে যে দাদা! আমরা ঢেউটিন বিতরণ করছিলাম ওই দিন (১৪ মার্চ)। ঢেউটিন বিতরণ করার সময় আমাদের এইখানে রেজিষ্টার ও মাস্টাররোলে স্বাক্ষর নিতে হয়। ওইদিন একজন বৃদ্ধ তার জোয়ান ছেলেকে নিয়ে ঢেউটিন নিতে আসছিল। কিন্তু বৃদ্ধ লোকটি স্বাক্ষর দিতে পারেনি; বয়স বেশি জন্য। তখন বৃদ্ধ লোকটির পক্ষে তার ছেলের স্বাক্ষর নিয়েছি রেজিষ্টারে। ছেলেটি লাইনে দাঁড়াইছিল টিন নিতে। তাকে স্যার (পিআইও) জিজ্ঞাসা করেছিল; টিন কার নামে। ছেলেটি বলছে আমার বাপের নামে; ওই যে ওখানে বসে আছেন। বাবা অসুস্থ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা নিয়ে স্যার আমাকে দোষারোপ করছে। সাথে সাথে স্যার আমাকে ডেকে সবার সামনে বাম গালে মেডেল কইরে এক থাপ্পর মারেন। পরে আমাকে অফিসে গিয়ে ইকবালকে ডাকতে বলেন।’
ঢেউটিন বিতরণকালে তখন ওইখানে আছিলেন; উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, একজন সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢেউটিন নিতে আসা অর্থ শতাধিক বাঙ্গালি-পাহাড়ি মানুষজন।
এ বিষয়ে কোথাও অভিযোগ করেননি এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনাটি ইউএনও স্যার কার কাছে যেন শুনছে। এখন দেখছি এটা উপজেলার সবাই জানে। অভিযোগ করে আর কী হবে।’
পিআইও নুরুন্নবী সরকার ২০১৫ সালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট ও অসদাচরণসহ নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুনীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) পাঁচটি মামলা হয় সে সময়।
এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সুন্দরগঞ্জে নদী ভাঙন ও দুঃস্থদের ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। পরে সেই ঢেউটিন উদ্ধার হয় একটি মাদরাসা থেকে। এ ঘটনার পর অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুল মালেক তদন্তে সত্যতাও পান। পরে টিন আত্মসাৎ করার প্রমাণ পাওয়ায় পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন রংপুর সমন্বিত দুদকের এক কর্মকর্তা।
একই অর্থ বছরে সুন্দরগঞ্জ রিপোর্টার্স ক্লাবের উন্নয়ন ও একটি রাস্তা সংস্কারের টিআর-কাবিখা প্রকল্পে ভুয়া কমিটি দেখিয়ে নগদ টাকা ও ৫ টন চাল আত্মসাত করেন নুরুন্নবী। পরে তদন্তে এ অভিযোগের সত্যতাও মেলে।
এছাড়া ২০১৬ সালের ৩ মার্চ একটি ব্রিজের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে মেসার্স নিশা কনস্ট্রাকশনের ঠিকাদার ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক ছামিউল ইসলাম সামুর কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা কয়েকজন সাক্ষীর সামনে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরে প্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ২৪ লাখ টাকা আত্মসাত করেন পিআইও। এ ঘটনায় পিআইওসহ আটজনের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেন দুদক সমন্বিত রংপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোজাহার আলী।
২০১৭-১৮ অর্থ বছরে টিআর-কাবিখার বিশেষ বরাদ্দের দুই কোটি ২৮ লাখ টাকার কাজ সম্পূর্ণ না করেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই ধরনের অভিযোগ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরেও উঠে পিআইও নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে।
এদিকে, ২০১৯ সালের জুন মাসে সুন্দরগঞ্জের উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পৌনে তিন কোটি টাকার বিলে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ ওঠে নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক একই বছরের ৩০ জুন সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি ( জিডি) করেন।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দেশজুড়ে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে তার বিরুদ্ধে টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আংশিক কাজ করেই অর্থ উত্তোলন ও বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগে তাকে ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সন্দীপে বদলি করে অধিদপ্তর।
তবে অদৃশ্য কারণে সে সময় পিআইও ছাড়তে নারাজ ছিলেন সুন্দরগঞ্জের চেয়ার। নানা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি শেষ পর্যন্ত কর্মস্থল সন্দীপে যোগদান না করে বদলির (স্ট্যান্ড রিলিজ) আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তার দাম্ভিকতা ও চ্যালেঞ্জ কোন কাজেই আসেনি। ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সন্দীপে তাকে যোগদান করতে বলে দুর্যোগ অধিদফতর। এরপর তিনি সন্দীপে যোগদান না করে বদলির আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হন। দুই মাস পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট বদলির আদেশ বহাল রেখে রায় দেয়। পরে অধিদফতর তাকে পূণরায় সন্দীপ থেকে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করে। এরপর তিনি ২৫ মার্চ যোগদান করতে বাধ্য হয় বাঘাইছড়িতে।
সুন্দরগঞ্জে কর্মরত থাকালীন নানা অভিযোগ ও অসদাচরণের কারণে ‘বিতর্কিত পিআইও’ হিসেবে পরিচিত পান তিনি। সেই সাথে গত ২৪ ফেব্রয়ারি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে উপজেলা পরিষদে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এই নুরুন্নবী সরকারের অফিস কক্ষে ঢুকে ইউপি সদস্য সমর বিজয় চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। যা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন নিহতের পরিবার।
নিহত সমর বিজয় চাকমার পরিবার ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্য দিবালকে এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকারকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। সেই সাথে নিহত সমর বিজয় চাকমার স্ত্রী ববিতা চাকমার দাবি- হত্যাকাণ্ডের দিন পিআইও নুরুন্নবী তার স্বামীকে মোবাইল ফোনে অফিসে ডেকে নিয়েছেন। অফিসে যাওয়ার পরেই এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়।
এ বিষয়ে ববিতা চাকমা বিডি গাইবান্ধা ডট নিউজকে জানান, ‘সমর বিজয় চাকমার সাথে কিছুদিন ধরে পিআইও নুরুন্নবী সরকারের ঝামেলা চলে আসছিল। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও অজানা কারণে বিলের কাগজে স্বাক্ষর দিচ্ছিলেন না নুরুন্নবী। এ নিয়ে প্রায়ই সমর বিজয় চাকমা নুরুন্নবীর সাথে ফোনে কথা বলতেন। ফোনে দুজনের তর্ক-বিতর্কও হয়েছে; এসব নিজ কানে শোনার দাবি করেছেন নিহতের স্ত্রী ববিতা চাকমা।’
বিডি গাইবান্ধা ডট নিউজকে তিনি বলেন, ‘পিআইও খালি ওকে (সমর) ডেট (সময়) দিত। সোমবার গেলে বলে মঙ্গলবার; মঙ্গলবার গেলে বুধবার। এভাবে শুধু ঘুরায়।’
তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে মেম্বরদের নিমন্ত্রণ ছিল আমাদের বাড়িতে (মামলার বাদি আরেক ইউপি সদস্য বিনয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ইউপি সদস্য)। সেখানে খাইতে বসে তারা আলোচনা করছিল; কাল স্যার (নুরুন্নবী) অফিসে ডেকেছে। সকালে স্যার তাকে ফোন করে অফিসে ডাকে (২৪ ফেব্রুয়ারি)। সকাল সাড়ে নয়টার ও (সমর) কিছু না খেয়েই বাসা থেকে বের হল বিনয় দাদাসহ। এরপর সাড়ে ১২টার দিক আমার ভাসুর খবর দেন; অফিসে গোলাগুলি হচ্ছে। এরপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
ববিতা চাকমা জানান, তার স্বামী সমর বিজয় ছিলেন প্রতিবাদি। অন্যান্য ইউপি সদস্যদের সমস্যাগুলো তিনি প্রতিবাদ করতেন সব সময়।
তিনি বলেন, ‘সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিলে স্বাক্ষর নিতে স্যারের (পিআইও) অফিসে যায় ওরা (নিহত সমর, ইউপি সদস্য বিনয়)। পরে শুনছি; মেম্বরদের সাথে ঝগড়া হয় স্যারের। পরে তাদের বুধবারে অফিসে যেতে বলে স্যার।’
ববিতা চাকমা আরও বলেন, ‘বুধবারে সকালে নাস্তা (টিফিন ভাত) না করেই অফিসে গেল সে। একবার আমাকে ফোন করে ও (স্বামী) বলল; স্যার এখনো আসেনি ফিরতে লেট (দেরি) হবে। এসে নাস্তা করবো বাসায়।’
‘বাসায় ফিরে যে লোক নাস্তা করবেন; তাই এলো লাশ হয়ে। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
এদিকে, গত বছরের ২৫ মার্চ রাতে রুপকারী ইউনিয়নের মগবান এলাকায় নিজ ঘরে ঢুকে সমর বিজয় চাকমার বড় ভাই ভূষন চাকমা ওরফে দুদর্ব চাকমাকে (৪৩) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ভূষণ চাকমার অপরাধ তিনি ছিলেন জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থীত যুব সংগঠন যুব সমিতির সদস্য।
এদিকে, সমর বিজয় চাকমা নিহতের পর তার স্ত্রী ববিতা চাকমা বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকারকে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযোগ তোলেন। এরপর থেকে পিআইও নিজেকে নিদোষ দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু তিনি গত ১০ মার্চ বাঘাইছড়ি থেকে বদলির জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে আবেদন করেন। আর তার এই বদলির তোরজোড়কে সন্দেহের চোখে দেখছে নিহত সমরের স্বজন, পরিবার ও তার সংগঠনের নেতারা।
বদলির আবেদনে নুরুন্নবী সরকার উল্লেখ করেন, গত ২৪ ফেব্রয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় তার কার্যালয়ে তার উপস্থিতিতেই, তার অফিসের টেবিলের সামনের চেয়ারে বসা রুপকারী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সমর বিজয় চাকমাকে পরপর দুই রাউন্ড গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়া আরও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালানো হয়।
তবে তার সামনে দুর্বৃত্তরা দিনদুপুরে গুলি চালিয়ে সমর বিজয়কে হত্যা করলেও নুরুন্নবী সরকারের শরীরে কোন আর্চ হয়নি। সেই সাথে তার সরকারি কক্ষে চোখের সামনে এই মর্মান্তিক ঘটনার পর তিনি সরকারিভাবে কোন পদক্ষেপ বা নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানায়নি। উল্টো ঘটনার পর অভিযোগ যখন তার দিকে; সে সময় তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বদলির জন্য।
এ বিষয়ে সমর বিজয় হত্যা মামলার বাদি ইউপি সদস্য বিনয় চাকমা বলেন, ‘ঘটনার তিন দিন আগে আর কী? রোববারের দিন; আমি আর সমর দাদাসহ অফিসে গেছিলাম পিআইও সাথে কথা বলতে। তখন পিআইও’র সাথে সমর দাদার কথা কাটাকাটি হইছিল। ফাইনাল বিলটা আটকে দিছিল এই জন্য। তখন আগামী বুধবারে আমার অফিসে আসো; এইভাবে বলছিল পিআইও আর কী?’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন অফিসে পিআইও’র সাথে আমার উচ্চস্বরে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। আমি ছিলাম সোজা পিআইও সামনে বসা; সমর আমার পিছনের চেয়ারে আর বামে ছিল পান্ডব চাকমা (তিনজনেই কাবিখা প্রকল্পের বিলে স্বাক্ষর নিতে পিআইও’র অফিসে যান)। আমাদের আরেকজন রিকেল চাকমা ছিল রুমের বাহিরে জানালার পাশে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সাথে পিআইও তর্কের সময় সমর দা একটা কথা বলছিল; বিষয়টা এ রকম না আর কী? দ্যান টাইমে (এমন সসময়) গুলির আওয়াজ শুনি।’
সরকারি পিআইও অফিসে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া ঘটনার দিন নুরুন্নবী সরকার নিজেই সমর বিজয় চাকমাকে ফোন করে অফিসে ডেকে নিয়েছেন। হত্যার ঘটনায় পিআইও কী জড়িত; এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদি ইউপি সদস্য বিনয় চাকমা বলেন, ‘প্রথম থেকেই পিআইও’কে সন্দেহ হচ্ছিল। ওই পিআইও’র সাথে সমর দাদার অনেক বার কথা কাটাকাটি হইছিল। আমারও হয়েছিল। এজন্য সন্দেহ হয়।’
বিনয় চাকমা বলেন, ‘পনের পারসেন্ট টাকা পিআইও’কে দিয়ে এই বিলের তিন কিস্তির বিল তুলি। শেষের বিলটা ছিল মূলত ১ লাখ ১২ হাজার পাঁচশ টাকার। পনের পারসেন্ট দেয়ার পর আরও চাইছিল পিআইও। এটার জন্যই স্বাক্ষর দিতে চাইছিল না।’
‘শুধু সমর বা আমার বিল আটকে দিছে না; প্রতিটা ইউনিয়রের কাবিখার বিল আটকাই দিছে পিআইও- বলেন বিনয় চাকমা।’
এ বিষয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরনবী সরকার বলেন, ‘প্রকল্প নিয়ে আমি কাউকে ডাকিনি। সমর বিজয় চাকমার স্ত্রীর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। শুধু তাই নয়, সমর বিজয় চাকমার সাথে প্রকল্প নিয়ে আমার কোনো তর্কও হয়নি।’
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. ছুফিউল্লাহ বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি বলা সম্ভব নয়। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি হতে পারে টার্গেট কিলিং।’
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘হটাৎ গুলির শব্দ শোনার পর আমি এবং আমার কক্ষে থাকা অন্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দেহরক্ষীকে দরজা আটকিয়ে দিতে বলি। পরে আমরা সেখানেই অবস্থান করি।’
সরকারি অফিসে বসে পিআইও নুরুন্নবী সরকারের ধুমপান ও সহকর্মীকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিতের বিষয় জানতে জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামানকে ফোন করলে তিনি ক্ষেপে যান। তিনি বলেন, ‘আপনি থাকেন গাইবান্ধায়। গোপন তথ্য পান কিভাবে?’
এ সময় তিনি কোন বক্তব্য না দিয়ে বলেন, ‘এখন আমার কি করতে হবে। এগুলো তার ব্যক্তিগত বিষয়। যা কিছু জানার ওনাকে (পিআইও) বলেন।’
এই অভিযোগ দুটি আপনার জানা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রোকনুজ্জামান আবারও ক্ষিপ্ত হয়ে উচ্চস্বরে বলেন, ‘আপনি যা জানেন; তাই লেখেন। আমার কোন বক্তব্য নাই। আপনি যা পারেন তাই করেন। আমার বক্তব্যে কোন যায় আসে না।’
এই রিপোর্টটি করতে সহযোগিতা করেছেন, বিডি গাইবান্ধা ডট নিউজের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি ও বাঘাইছড়ি উপজেলার স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী।