রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নবীনেওয়াজের কার্যালয়ে এই সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। সিন্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে আহাম্মদ আলীসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের নভেম্বর/২০ মাসের বেতন বিল প্রস্তুত পূর্বক আগামি ৩ কার্যদিবসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও।
আহাম্মদ আলীর বেতন-ভাতা স্থগিতের ঘটনার তদন্তকার্যে রবিবার বিকেলে ইউএনও’র কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাহাবুবর রহমান ও তৎকালীণ কমিটির সভাপতি সুবল চন্দ্র সরকার বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরেন। এসময় ভুক্তভোগী আহাম্মদের বেতন বিল ও ইনডেক্সসহ তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখেন ইউএনও। এরপর ইউএনও বেতন স্থগিতের প্রক্রিয়াসহ সপক্ষে তথ্য-প্রমাণ চাইলেও কোন সদত্তর দিতে পারেনি প্রধান শিক্ষকসহ তৎকালীণ সভাপতি। যদিও জন্ম তারিখ জটিলতায় কমিটির সিদ্ধান্তে রেজুলেশন করে বেতন স্থগিতের দাবি করেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। এছাড়া আর কোন নিয়ম-বিধিবিধান এমনকি আদেশ-নির্দেশনাও তারা ইউএনওকে দেখাতে পারেনি। শুধু তাই নয়, নিজেদের দোষ আড়াল করতে প্রধান শিক্ষক ও সাবেক সভাপতি নানা অজুহাতে সব দায় প্রধান শিক্ষক (তৎকালীন) জাহাঙ্গীর আলমের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন।
ইউএনও নবীনেওয়াজ বলেন, ‘নিয়ম-নীতিমালা উপেক্ষা করে স্কুলপিয়ন আহাম্মদ আলীর বেতন স্থগিতের ঘটনা শুধু অমানবিক নয়, অপরাধও বটে। জন্ম তারিখ জটিলতা দেখিয়ে ইনডেক্সভুক্ত আহাম্মদের বেতন-ভাতা বন্ধের এখতিয়ার নেই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির। তদন্তে নথিপত্র পর্যালোচনায় বেতন-ভাত স্থগিতের ঘটনাটি সংশ্লিষ্টদের যোগসাজস এবং নৈতিকতা বিরোধী বলে প্রতিয়মাণ হয়। তার বেতন প্রদানে কোন জটিলতা না থাকায় আপাততে নভেম্বরসহ চার মাসের বকেয়া বেতন দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করি চলতি মাসেই বেতন হাতে পাবেন তিনি’।
দীর্ঘ প্রত্যাশীত বকেয়া বেতন পাচ্ছেন এমন খুশিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি আহাম্মদসহ তার স্ত্রী আছিয়া। তারা বলছেন, অন্যায়ভাবে ক্ষমতার জোরে ৩ বছর ধরে বেতন বন্ধের ফলে তাদের দু:খ-কষ্টে জীবন চলছে। তবে ইউএনও’র নির্দেশ-আশ্বাসে বেতন পাওয়ার জন্য এবারেই শেষ অপেক্ষা তাদের। বেতনের টাকা হাতে পেলে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার আর নিজের চিকিৎসাসহ দু’চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার আশা করছেন আহাম্মদ আলী।
ইউএনও’র কার্যালয়ে তদন্তের সময় উপস্থিতি ছিলেন, সাদুল্লাপুর উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি প্রভাষক আবদুল জলিল সরকার, যুগ্ন সম্পাদক এসটিএম রুহুল আমিন, সাদুল্লাপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান পলাশ, সাংবাদিক পিয়ারুল ইসলাম হুমায়ন। এছাড়া আহাম্মদের স্ত্রী আছিয়া বেগম, নাতি আতাউর, আলমগীর ও বরাখাস্তের শিকার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমও উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ, কামারপাড়া ইউনিয়নের উত্তর হাটবামুনি গ্রামের বাসিন্দা আহাম্মদ আলী ১৯৮৯ সালের ১৫ মার্চ কামারপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন) পদে যোগদান করেন। তার ইনডেক্স নং ৫৪৫২০৯। ২০০৩ সালের মে মাসে বেতন মঞ্জুরের পর থেকে সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন আহাম্মদ আলী। কিন্তু ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বিদ্যালয়ের এক সভায় তৎকালীন কমিটির সভাপতি সুবল চন্দ্র সরকার ক্ষমতার অপব্যববহার করে তার বেতন-ভাতা স্থগিত করেন।