গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী নামকরা তীর্থস্থান ভরতখালী কাষ্ঠ কালি মন্দির। এখানে বৈশাখ মাস জুড়ে চলছে মাসব্যাপী মনোবাসনা পূরনের মেলা। প্রতিবারের মতো এবারও শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাসব্যাপী মনোবাসনা পূরণের মেলা ও পুণ্যার্থীদের আগমন। মেলা বসায় আনন্দিত হচ্ছে নারী, পুরুষ সহ বিভিন্ন বয়সী ভক্তপ্রান মানুষ । শনিবার সরেজমিনে কাষ্ঠকালি মন্দিরে গেলে মনোবাসনা পূরনে পুণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।
প্রকাশ, প্রতি বছর বৈশাখ মাসের প্রথম শনিবার ও মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে বৈশাখ মাসের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ব্যাপী চলে ঐতিহ্যবাহী এই পুজা ও মেলা। সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস পূজা অর্চনা ও বলি দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়। ভরতখালী কাষ্ঠকালি মন্দির এ অঞ্চলের হিন্দু ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান। এমনটি মন্তব্য ব্যাক্ত করেন ভরতখালী তীর্থস্থানে আসা পুণ্যার্থীরা।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় দুইশত বছর পূর্বে এ মন্দির নির্মিত হয়েছিল। তবে এই মন্দিরকে ঘিরে অলৌকিক একটি ঘটনা। তা হচ্ছে সাঘাটার ভরতখালির যমুনা নদী থেকে ভেসে একটি পোড়া কাঠ থেকে এই মন্দির সৃষ্টি হয়েছে। তৎকালীন জমিদার রমনী কান্ত রায় শ্রী শ্রী কাষ্ঠকালি দেবতাকে স্বপ্নাদেশ পান যে, আমি তো ঘাটে এসেছি, তুই আমাকে পূজা দে। রাজা এই পোড়া কাঠের টুকরোটিকে পূজা দিলে এখান থেকেই এটি কালী মূর্তিতে রূপান্তরিত হয়। তখন থেকে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শনি ও মঙ্গলবার নিয়মিত পূজা অর্চনা হয়ে আসছে। এখানে মায়ের কাছে যারা মনোবাসনা কামনা করেন তা প্রাপ্তি পান ভক্তরা।
“গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুণ্যার্থীদের পাশাপাশি মেলায় হাজারো দর্শনাথীদের প্রচুর ভীড়। ভারত সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার অনেক দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ মন্দিরে মানত নিয়ে এসেছে মনোবাসনা পূরণের আশায়। মন্দিরে ধূপ, মোমবাতি, আগরবাতি জালিয়ে ও তেল দিয়ে তারা মায়ের (ঈশ্বর) কাছে প্রার্থণা করছে। মন্দিরের চারপাশে অনেককেই পাঠা (ছাগল) নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মনোবাসনা পূরণের লক্ষে প্রার্থনা শেষে মন্দিরের গুরুর (ঠাকুর) নির্দেশ মোতাবেক প্রায় ৫০ থেকে শতাধিক জোড়া পাঠা (ছাগল) বলি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মায়ের নিকট মনোবাসনার প্রার্থনায় মায়ের কাছে মিষ্টি জাতীয় ভোগ নিবেদন করছে।
এ উপলক্ষে মন্দিরের পাশে পাকুর তলায় প্রায় ৭ একর এলাকা জুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। উত্তর ও দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ মনোবাসনা পুরনে ও ঘুরতে আসেন এখানে। মেলায় দই, বাতাসা, নিমকি, সন্দেশ সহ বাহারি খাবার, বাঁশের তৈরী কুলা, আকর্ষনীয় হাত পাখা, ডালি, চালন, মাটির তৈরি হাড়ি, থালা, বিভিন্ন মূর্তি, পুতুল, বাঘ, রান্নার কাজে ব্যবহৃত নানা তৈজসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসে থাকে দোকানিরা।
”গাইবান্ধার সন্তান ও ভারত এর শিলিগুড়ির বাসিন্দা শেফালী রানী সাহা” এই প্রতিবেদককে বলেন- আমি ছোট বেলা থেকে এই মায়ের মন্দিরে আসি। এটা খুব জাগ্রত মন্দির। এখানে সবাই মনোবাসনা কামনা করে থাকে। এখানে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের শনি ও মঙ্গলবার পুজা মেলা উপলক্ষে অনেক ভীড় হয়। দূর দুরান্ত থেকে অনেক তীর্থ যাত্রী এখানে আসে।”
” গাইবান্ধার কুপতলার বেড়াডাঙ্গার বাসিন্দা ও অগ্রনী ব্যাংক নলডাঙ্গা শাখার অফিসার সুজন কুমার বর্মন ” এই প্রতিবেদককে বলেন- প্রতি বছরের ন্যায় এবারো এসেছি প্রার্থনা করতে। মায়ের কাছে প্রার্থনা করলে অনেক মনোবাসনা পূর্ণ হয়ে যায়। এটা অনেক জাগ্রত ও নামকরা তীর্থস্থান ও মন্দির। বৈশাখ মাসের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে পুজা ও মেলা বসে। বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে ভক্তরা আসে মায়ের কাছে প্রার্থনা ও আশীর্বাদ গ্রহণ করতে। এখানে সকলের মনোবাসনা পূর্ণ হয়। ভক্তরা এ কারণে এখানে ছুটে আসে। আমি প্রতিবছর মায়ের কাছে যা প্রার্থনা করেছি।তা সম্পূর্ণভাবে প্রাপ্ত হয়েছি।
“কাষ্ঠকালি মন্দির এর সাধারন সম্পাদক অশোক কুমার সিনহা” বলেন, এই মন্দিরে আমি দীর্ঘ ৪৭ বছর যাবত সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আশাকরি সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে এই মেলা চলবে ও আরোও ভক্তবৃন্দের পদচারণা পড়বে।
উল্লেখ্য, মন্দিরে মানত দিতে আসা হাজারো মানুষের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সবদিক দিয়ে মেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা মোটামুটি ভালো।
বিডি গাইবান্ধা/