তিনদিনের ছুটি নিয়ে তেরদিন অফিস ফাঁকির ঘটনায় আলোচিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকার তার কর্তৃপক্ষের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এ কারণে তাকে বিভাগীয় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে অধিদফতর। একই সঙ্গে তাকে ভবিষ্যতের জন্য সর্তক করা হয়েছে।
রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া উপসচিব (উপপরিচালক, প্রশাসন-১) মোহাম্মদ শফিউর রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় কর্মরত (পিআইও) নুরুন্নবী সরকার গেল বছরের ৩১ জুলাই তিনদিনের ছুটি নিয়ে কর্মস্থল ছাড়েন। কিন্তু ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি অফিসে অনুপস্থিত থাকেন। পরে তার অনুপস্থিতির বিষয়টি লিখিতভাবে অধিদফতরকে জানায় বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা (৩৪/২২) রুজু করে অধিদফতর।
অফিস আদেশে বলা হয়, কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অনুপস্থিত থাকা এবং জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ না করা দায়িত্বের প্রতি চরম অবহেলা ও অসদচারণের সামিল। বরং নুরুন্নবী সরকার গত ১৪ আগষ্ট প্রধান কাযালয়ে উপপরিচালক (প্রশাসন-১) পরিচালক (প্রশাসন) এবং মহাপরিচালকের নিকট তার নিজের বদলীর তদবিরে আসেন। এই অসদচারণের দায়ে ৩৪/২২ বিভাগীয় মামলা রুজু করে গত ২৯ আগষ্ট নুরুন্নবীকে অভিযোগনামা প্রেরণ করা হয়।
কিন্তু তিনি জবাব দাখিল না করে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জাতীয় দিবসে অনুপস্থিতির বিষয়ে আন্তরিক দু:খ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একই সঙ্গে অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে তিনি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র তদন্ত কর্মকর্তার নিকট দাখিল করেন। তাই সার্বিক বিবেচনায় তাকে ভবিষ্যতের জন্য সর্তক করে বিভাগীয় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হলো বলে অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়।
এর আগেও, আর্থিক দুর্নীতি, আদেশ অমান্য ও আসদচারণের দায়ে একাধিক বিভাগীয় মামলায় নুরুন্নবী সরকারের বেতন গ্রেড পদাবনতি এবং বার্ষিক বর্ধিত বেতন স্থগিতসহ লঘুদণ্ড দেয় অধিদফতর। একই সঙ্গে আদেশ-নির্দেশনা অমান্য করায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তও করা হয়েছিল।
শুধু তাই নয়, সুন্দরগঞ্জে টানা পাঁচ বছরের চাকরিতে ঘুষ-দুর্নীতির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুদকের তিনটিসহ পাঁচটি মামলা দায়ের হয় সুন্দরগঞ্জ থানায়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নুরুন্নবী সরকারের ঘুষ-দুর্নীতির একাধিক প্রতিবেদন প্রচার হয় যমুনা টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। পরে সুন্দরগঞ্জ থেকে বদলি করলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন নুরুন্নবী। এক পর্যায়ে ওই বছরের ১৫ অক্টোবর রংপুর আদালতে পৃথক দুটি মানহানির মামলা করেন তিনি। এতে যমুনা টিভির প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান পলাশসহ গাইবান্ধার পাঁচ সাংবাদিককে বিবাদি করা হয়। আগামি ৬ এপ্রিল মামলা দুটির ডিসচার্জের ওপর শুনানির দিন ধার্য্য রয়েছে রংপুর আদালতে।
এদিকে, মানহানির দুই মামলার চার্জ শুনানির দিনে গেল বছরের গত ২ আগস্ট রংপুর আদালতের বারান্দায় বিবাদি জিল্লুর রহমান পলাশসহ পাঁচ সাংবাদিককে আঙুল উঁচিয়ে অশ্লিল গালাগাল ও হুমকি দেয় নুরুন্নবী সরকার। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের পক্ষে রংপুর কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ৩৭৭) করা হয়। সম্প্রতি জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরির্দশক বিজন সাহা সরেজমিন তদন্তে গালাগাল ও হুমকির ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। একই সঙ্গে অভিযুক্ত নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে নন এফআইআর প্রসিকিউশনে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা হয়েছে।