খাদ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির (১৩-২০ গ্রেডের) কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী ঢাকায় খাদ্য অধিদপ্তরের সামনে এই কর্মসূচী পালন করেন তারা। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত চাকরিপ্রত্যাশীরা এই কর্মসূচীতে অংশ নেন।
মানববন্ধন কর্মসূচী চলাকলে বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালের ১১ জুলাই ২৪টি পদে এক হাজার ১৬৬ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে খাদ্য অধিদপ্তর। এতে
১০টি ক্যাটাগরিতে ১১৩৫ পদের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে প্রায় ১৩ লাখ। করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ২০২১ সালের নভেম্বরে লিখিত পরীক্ষা কয়েকটি ধাপে গ্রহণ করা হয়। উপখাদ্য পরিদর্শক পদ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সকল পদের ব্যবহারিক ও ভাইভা শেষ হয় ২০২২ সালের মার্চে এবং সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে উপখাদ্য পরিদর্শক পদের ভাইভা গ্রহণ করে অধিদপ্তর। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়া হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়াই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় আর সেই অভিপ্রায় বাস্তবায়নে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। কোন প্রকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি খাদ্য মন্ত্রনালয় বরদাশত করবে না বলে খাদ্যমন্ত্রী এই বার্তা জানিয়েছেন লিখিত পরীক্ষার আগে। মন্ত্রীর ভিডিও বার্তায় আরও উল্লেখ আছে, ২০২২ সালের মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছরেও ১০টি ক্যাটাগরির ১১৩৫ পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর।
খাদ্য অধিদপ্তরের উদ্দেশ্য ছিল অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও গতি আনা। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৫ বছরেও অধিদপ্তর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাই দ্রুত ফলাফল প্রকাশের দাবিতে এই মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয় বলে জানান খাদ্য অধিদপ্তরে চাকরিপ্রার্থীরা।
এদিকে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রত্যাশীরা দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে চাকরির আশায় অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। প্রার্থীরা জানিয়েছেন, খাদ্য অধিদপ্তরে চাকরিপ্রত্যাশীদের অনেকেরই চাকরির বয়স শেষ হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে এসব বেকার চাকরির আশায় থেকে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জাহাঙ্গীর আলম নামে এক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, প্রায় এক বছর আগে আমি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ভাইভা দিয়েছি। আমার পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার বাবা-মা অনেকদিন থেকে অসুস্থ। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়েছে। ফলাফলের আশায় পরিবারের সবাই অধীর অপেক্ষায় আছে। ফারহানা আক্তার নামে এক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে একটা চাকরির চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য প্রায় ৫ বছর অপেক্ষা করা কষ্টকর। আর তাই দ্রুত ফলাফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন এই প্রার্থী। রায়হান কবির নামে আরেক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন-আগে আমি একটি কোম্পানিতে চাকরি করতাম। করোনায় চাকরিটা চলে যায়। এরপর অনেক কষ্টে পড়ালেখা চালিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরে পাশ করে ভাইভা দিয়েছি। ফলাফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় কোম্পানির চাকরি কিংবা ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা।
চাকরিপ্রার্থীরা বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এভাবে ধীরগতির কারণে চাকরিপ্রার্থীদের হতাশার সাথে অধিদপ্তরের শূন্যপদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সম্প্রতী খাদ্যমন্ত্রী ১৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এবং ফলাফল প্রকাশের পর আরও ১৫০০ পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রীর দেওয়া সেই সময়সীমাও পেরিয়ে গেছে, ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর। চাকরিপ্রার্থীরা আরও বলেন- তারা অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছে ফলাফলের বিষয়ে জানতে ফোন করেছেন, প্রতিবারেই কর্মকর্তারা দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কোন ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। আর তাই মানববন্ধন থেকে চাকরিপ্রত্যাশীরা আগামী ৩ মার্চের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। ৩ মার্চের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা না হলে আমরণ অনশনের মতো কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন এসব চাকরিপ্রার্থী।