গাইবান্ধা সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও দুর্নীতির মাধ্যমে জেলার পলাশবাড়ী পৌর শহরের প্রানকেন্দ্র চৌমাথা মোড়ে সৈয়দ প্লাজা মার্কেটটি গোপন নিলামে বিক্রি করায় ওই মার্কেটের স্বত্বাধিকারী ও মাকের্টের ব্যবসায়ীসহ ১১টি পরিবার সহায় সম্পদ হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
২২ জানুয়ারী রবিবার গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কেটের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ আব্দুল্লাহেল কাফি তার লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন। এ সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আব্দুল্লাহেল কাফি লাবলু তার লিখিত বক্তব্যে জানান, গত ১৯৯৮ সালে মার্কেটটি নির্মাণ করা হয় এবং মার্কেটের ওপর আবাসিক হোটেল নির্মাণের জন্য ২০০০ সালে সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা শাখায় ৪৫ লক্ষ টাকা ঋণ প্রস্তাব করলে ২০০১ সালে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ মঞ্জুরী হয়। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তারা নানা প্রশাসনিক জটিলতা দেখিয়ে দীর্ঘ ১৩ মাস পর প্রথম কিস্তি ছাড় করে। ওই সময়ে নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পায়। ব্যাংকের নিবির তদারকি ও প্রকল্প কাজের অগ্রগতি সাপেক্ষে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির টাকা দু’বছর অপেক্ষার পর ২০০৩ সালে প্রদান করলেও তৃতীয় তলা সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে প্রকল্পটি শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। অন্যদিকে ব্যাংক কিস্তি খেলাপী দেখিয়ে ৩৯ লক্ষ ২৭ হাজার ৬ শত ৯৯ টাকা ৫০ পয়সার দেনায় ২০০৭ সালে গাইবান্ধার অর্থ ঋণ আদালত মামলা দায়ের করে। ব্যাংকের নানা প্রশাসনিক জটিলতার কবলে পড়ে প্রকল্পটি রুগ্ন হয়। তদুপরি মামলার প্রকৃত পাওনা ২৫ লক্ষ টাকা ঋণের বিপরীতে সার্ভিস চার্জ সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা যোগ করা হয়। আবার ওই সময় লেজার হিসেবে পাওনা ৩৬ লক্ষ ৩৪ হাজার ৩৭৬ টাকা ৫০ পয়সা হলেও অর্থ ঋণ মামলায় মোট ৩৯ লক্ষ ২৭ হাজার ৬ শত ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা দেনা দেখিয়ে ব্যাংক মামলা করে। ব্যাংক অর্থ ঋণ আদালতে মর্গেজকৃত সম্পত্তির তৎকালীন বাজার মূল্য বাদ না দিয়ে জালিয়াতির প্রশ্রয়ে একতরফা ডিগ্রি হাসিল করে। বিষয়টি নিয়ে শাখা ব্যাবস্থাপকের সঙ্গে দফায় দফায় মিমাংসার জন্য বসায় ব্যাবস্থাপক আব্দুল কুদ্দুস শর্তসাপেক্ষে সুদ মওকুফ প্রস্তাব দাখিলের সম্মতি দেন। শর্তানুযায়ী ৮ লক্ষ টাকা ডাউন পেমেন্ট হিসেবে জমা করে সৈয়দপ্লাজার মালিক পক্ষ। ২০১১ সালের ২২ মার্চ ৮ লক্ষ টাকার টিটি এবং পূর্বের জমা ২ লক্ষ টাকা মোট ১০ লক্ষ টাকাসহ সুদ মওকুফের প্রস্তাব গ্রহণ করলেও টাকা জমার পরদিনই শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুল কদ্দুস পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে মার্কেটটি দখল করেন। গোপন আতাতের মাধ্যমে ২০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ব্যবস্থাপক সৈয়দপ্লাজা মার্কেট নিলামে বিক্রি করার পায়তারা করছেন জেনে মার্কেটের ব্যবসায়ী জুয়েলের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মিমাংসার প্রস্তাব দিলে তিনি বলেন, ২০ লক্ষ টাকা মূল্যের গাড়ির চাবি থেকে ৫ লক্ষ টাকা কী বেশি? এতে ওই ব্যবস্থাপকের কুউদ্দেশ্য বুঝতে পেরে মালিকপক্ষ সুবিচার পেতে মহামান্য হাইকোট বিভাগে ২৭২৯/১২ নং রিট পিটিশন দাখিল করলে হাইকোর্ট ডিগ্রি মামলার দাবী পরিশোধ করতে আদেশ দেন। উক্ত আদেশের প্রেক্ষিতে সৈয়দপ্লাজার মালিক ৪৪ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ডকুমেন্ট ফেরত চেয়ে অর্থ ঋণ আদালতে ২০/১৭ নং মিস কেস দায়ের করেন। মামলার সমস্ত প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় অর্থ ঋণ আদালত ঋণ পরিশোধ হয়েছে মর্মে আদেশ দিয়ে উপরোক্ত মামলাটি প্রত্যাখান করেন।
অতঃপর বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এমডি ও অর্থ মন্ত্রী বরাবর ২% ডাউন পেমেন্টে সুদ মওকুফের আবেদন করেন। কিন্তু ব্যবস্থাপক আব্দুল কুদ্দুস ডিজিএম হিসাবে গাইবান্ধায় যোগদান করেন। বর্তমান ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও এজিএমসহ জড়িত হয়ে গত বছরের ২৭ নভেম্বর ৬ কোটি টাকা মূল্যের সৈয়দপ্লাজা মাত্র ১ কোটি ১১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দ্রুত বিক্রয় ও হস্তান্তর করেন।
সৈয়দপ্লাজার স্বত্বাধিকারী আরো জানান, এলেঙ্গা হাটিকুমরুল, রংপুর, মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে (সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২) সৈয়দপ্লাজা একোয়ারের আওতায় ৩ গুণ টাকা পাওয়ার আশায় উক্ত দূর্ণীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ ঋণ আদালতের রায় উপেক্ষা করে ও অনুমতি ছাড়াই সৈয়দপ্লাজা মার্কেটটি নিলামে বিক্রি করে হস্তান্তর করেছে। ফলে ওই মার্কেটের নারী উদ্যোক্তাসহ ১০ টি পরিবার দিশেহারা হয়ে পথে বসেছে। মার্কেটের ১০ জন ব্যবসায়ীর পরিবারসহ সৈয়দপ্লাজা মার্কেটের স্বত্বাধিকারী পরিবারটিও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সংবাদ সম্মেলনে মার্কেট ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া, রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য,সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা মোটা অংকের দূর্নীতি করে পলাশবাড়ী পৌর এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিকট গোপন নিলামে উক্ত মার্কেট বিক্রি ও হস্তান্তর করায় ভুক্তভোগীরা সহ সচেতন মহল সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের এমন অনৈতিক কাজে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে উক্ত মার্কেটটি মূল মালিকের নিকট হস্তান্তরের দাবী জানান।