রাত পোহালে কাল ১৭ অক্টোবর সোমবার গাইবান্ধা জেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২২ এ মোট ৩৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩৩ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। জেলার ৭ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, কাউন্সিলর, নারী কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যগণ এ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে বিভিন্ন প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। সোমবার ১৭ অক্টোবর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ মোট ৩ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৮ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এরআগে প্রার্থীদের জেলার কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে এসব প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এই নির্বাচনে জেলা পরিষদের ২ নম্বর সাদুল্যাপুর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ এস এম আব্দুর রহমান সাধারণ সদস্য হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দকালে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
চেয়ারম্যান পদে প্রতীক পাওয়া ৩ প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত আবু বকর সিদ্দিক (তালগাছ), সাবেক চেযারম্যান মো. আতাউর রহমান (ঘোড়া) ও মো. শরিফুল ইসলাম (হেলিকপ্টার)। এছাড়াও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে কল্পনা রাণী (ফুটবল), মোছা তৌহিদা বেগম (দোয়াত কলম), মোছা মাজেদা বেগম (টেবিল ঘড়ি), আরিফা আকতার (মাইক), মোছা রোজীনা নাহিদ ফারজানা (দোয়াত কলম), উম্মে জাহান (টেবিল ঘড়ি), মোছা আফরুজা খাতুন (মাইক) ও মোছা রুনা আরজু মোনোয়ারা বেগম (হরিণ) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। সাধারণ সদস্য পদে প্রতীক পাওয়া প্রার্থীরা হলেন- মো. আব্দুর রশীদ (হাতি), মো. আলতাফ হোসেন (তালা), মো. এমদাদুল হক (বৈদ্যুতিক পাখা), মো. জামিউল আনছারী (টিউবওয়েল), এস এম আনোয়ারুল কবির (টিউবওয়েল), মো. শহিদুল ইসলাম (তালা), মো. সাইফুর রহমান মণ্ডল (অটোরিকশা), জাহাঙ্গীর আলম (তালা), তহিদুল আমিন মণ্ডল সুমন (টিউবওয়েল), মো. মনিরুজ্জামান (হাতি), মো. আবু সুফিয়ান মণ্ডল (তালা), মো. আব্দুল মতিন মোল্লা (বৈদ্যুতিক পাখা), আব্দুল হান্নান আজাদ (টিউবওয়েল), মো. জাহাঙ্গীর আলম (হাতি), এটিএম সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল (বৈদ্যুতিক পাখা), আব্দুল কুদ্দুস আকন্দ (তালা), আশরাফুল ইসলাম (টিউবওয়েল), মো. শাখাওয়াত হোসেন (হাতি), মো. শামসুজ জোহা (অটোরিকশা), আমজাদ হোসেন মিজান (তালা), মো. টুকু মিয়া (টিউবওয়েল), শুকুর আলী ফিরোজ (হাতি)। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনের মাঠ জমে উঠেছে। প্রার্থীরা জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তবে অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ভোটারগণ জানান, জাপার কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভোট কিনে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এবারও তিনি প্রতিটি ভোটারকে মোটরসাইকেল কিংবা লক্ষাধিক টাকা দিচ্ছেন ভোট দেওয়ার জন্য। এ ছাড়া ভোটারকে প্রভাবিত করতে তিনি তার গ্রামের বাড়িতে গরু জবাই করে খাওয়াচ্ছেন। তার সময়কালে জেলা পরিষদকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে দুদকে অনেক অভিযোগ রয়েছে। অনিয়ম দূর্নীতি তদন্ত হয়, কিন্তু প্রতিকার হয় না। এবারের নির্বাচনে যত টাকা পয়সা দিক জনপ্রতিনিধিগণ সঠিক স্বচ্ছ ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণকে নির্বাচিত করবেন।
গাইবান্ধা জেলা আওয়ামীলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে সুতরাং ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এবং তিনি ভোটে বিজয়ী হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, বিগত ভোটে আতা সাহেব চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য প্রত্যেক ভোটারকে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। তার সময়ে দূর্নীতির চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও। শুনেছি এবারও ভোটারকে ম্যানেজ করতে মোটরসাইকেল, কাউকে ১ লাখ টাকা নগদ দিচ্ছেন। আমার নিজ এলাকার কেন্দ্র সুন্দরগঞ্জ ভিডাব্লিউ কলেজ সেন্টারে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রভাব বিস্তারের নানামুখী চেষ্টা করছেন। ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে তিনিই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন অফিসসূত্রে জানা যায়, আগামীকাল ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে সাত কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এ ছাড়া নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে পুলিশ, র্যাব-এর পাশাপাশি আনসার সদস্য ও বিজিবি মোতায়েন করা থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে যাহা জেলা ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন হতে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গাইবান্ধার সাঘাটা, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর ও গাইবান্ধা সদরসহ ৭ উপজেলায় ৭টি কেন্দ্রে মোট ১ হাজার ১শ ২৪ জন জনপ্রতিনিধি এই ভোটে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোটগ্রহণ সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে চলবে একটানা দুপুর ২টা পর্যন্ত। এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে জেলার প্রায় ৩ শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী৷