পলাশবাড়ী পৌর শহরের নুনিয়াগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মোন্নাফ আলী। বয়স ৬৫ উপরে।কয়েক বছর আগে ব্রেণ স্টকে আক্রান্ত হয়ে সেই থেকেই বিছানায় পড়ে যায় মোন্নাফ।অভাব অনটনের সংসারে কখন কল্পনাও করতে পারেনি হুইল চেয়ারে করে চলাফেরা করবেন।খবর পৌঁছে যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) মফিজুল হক সরকারের কাছে।খবর শুনেই উদ্যোগ নেন মোন্নাফ আলীকে হুইল চেয়ার উপহার দেয়ার।১৫ অক্টোবর শনিবার সকালে হুইল চেয়ার নিয়ে হাজির হোন মোন্নাফ আলীর বাড়ীতে। হুইল চেয়ার পেয়ে খুশি মোন্নাফ আলী। এ সময় মোন্নাফ আলীর স্ত্রী জানান,মেজর সাহেবের এই অবদানে আমরা অনেক উপকৃত হলাম।তিনি মাঝে মধ্যেই আমাদের খোঁজ খবর নেন ও আর্থিক সহযোগিতা করেন। এ সময় পলাশবাড়ী বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য আলিউল ইসলাম বাদল,আব্দুল্যা আদিল নান্নু,সাংবাদিক সাইদুর রহমান মাস্টার,সমাজ সেবক জিন্নুরাইন উল্লাস উপস্থিত ছিলেন।
শুধু মোন্নাফ আলী নয় পলাশবাড়ী,সাদুল্লাপুর,গাইবান্ধা তথা সারা দেশের এ রকম হাজারো মোন্নাফ আলীর পাশে থেকে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর(অবঃ) মফিজুল হক সরকার।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) মফিজুল হক সরকার ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির জন্য নিজের জীবনকে বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধ পরবর্তীকালীন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সোনার বাংলা গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) মফিজুল হক সরকার।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) মফিজুল হক সরকার ১৯৫১ সালের ৬ মে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম তমিজ উদ্দীন সরকার ও মাতা মরহুমা মহিমা বেগম। তিনি স্থানীয় বাসুদেবপুর চন্দ্র কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পলাশবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসএসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য রংপুর কারমাইকেল কলেজে বিএ (অর্নাসে) ভর্তি হন। ১৯৬৬ সাল থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং ১৯৬৯ সালে কারমাইকেল কলেজে বিএ (অনার্সের) ছাত্র অবস্থায় গণ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে অভূতপূর্ব অবদান রাখেন।
১৯৭০ সালে ছাত্রলীগকে ঐক্যবন্ধ করার লক্ষ্যে ঐ সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দ শামসুল হক হিরু (বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি) নাজমুল আরেফিন তারেক (গাইবান্ধা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাথে জড়িত), মৃত মোজাম্মেল হোসেন লালু তাদের উপস্থিতিতে গাইবান্ধার কুপতলা, কামারপাড়া, নলডাঙ্গা, বামনডাঙ্গা, চৌধুরানী, পীরগাছা, অন্নদা নগর, কাউনিয়া, মীরবাগ এবং রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছাত্রলীগের আঞ্চলিক কমিটি গঠন করেন।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ সৈয়দ শামসুল হক হিরু, নাজমুল আরেফিন তারেক, মোজাম্মেল হোসেন লালুসহ আরো অন্যান্যদের সাথে গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) মফিজুল হক সরকার। ছাত্র অবস্থাতেই তিনি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ১১নং সেক্টরের অধীনে বেশ কয়েকবার সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) মফিজুল হক সরকার ২রা ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে জাতীয় রক্ষিবাহীনিতে যোগদান করে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯২ সালের মে মাসে মেজর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
বাংলা ৭১ কে তিনি জানান, চাকুরী জীবনে ১৯৮৭ সালে মরহুম রাষ্ট্রপতি হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় থাকাকালীন আমাকে জাতীয় পার্টিতে আমন্ত্রণ করেন। আমি তাঁর ডাকে সাড়া না দেয়ায় চাকুরী জীবনে আমাকে আর পদন্নতি দেয়া হয়নি। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও এর সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিরলসভাবে ভূমিকা পালন করেছি মর্মে আমি পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সর্বোপরি ১৯৯১ সালে বিএনপি’র শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই মেজর সাঈদ ইস্কান্দার এর গ্রুপে যোগদান না করায় এবং আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সৈনিক হিসেবে বাংলাদেশ রক্ষীবাহিনীতে যোগদান করার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে আমাকে বাধ্যতামূলক চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করতে হয়।
১৯৯২ সালে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত করছেন। তিনি নিজ এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে গরীব অসহায় মানুষদের সহযোগীতা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে সচেতনমূলক কর্মকান্ড, বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধ, কন্যা দ্বায়গ্রস্থ পিতার পাশে দাঁড়ানোসহ অসহায় ছেলে-মেয়েদের উচ্চতর লেখাপড়ায় আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করে আসছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) মফিজুল হক সরকার। তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের উপদেষ্টা, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ গাইবান্ধা জেলা কমিটি দক্ষ সংগঠক, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, পলাশবাড়ী উপজেলা শাখার সাবেক সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার্স ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য, বিশ্ব সন্ত্রাস বিরোধী সংগঠন, বাংলাদেশ সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, আর্মি গলফ ক্লাবের সদস্য এমেক্স নিটিং এন্ড ডায়িং ইন্ড্রাষ্ট্রিজের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) মফিজুল হক সরকার আরো জানান, তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সোনার বাংলা গড়তে আজীবন কাজ করে যাবেন।