গাইবান্ধা ব্রীজরোড দুর্গাবাড়ি মন্দির সহ পৌরসভার অধিনে ৬শ ৯টি মন্ডপে সিঁদুর ছোয়ানো ও মিষ্টি মুখ করানোর মধ্য দিয়ে ভক্তরা বিদায় জানায় দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গাকে।
পরে রাতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস- মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। চন্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে ষষ্ঠী তিথিতে ‘আনন্দময়ীর’ আগমনে গত ১ অক্টোবর থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। পরবর্তী ৫দিন গাইবান্ধা শহর সহ জেলা জুড়ে পূজামন্ডপগুলোতে পূজা-অর্চণার মধ্যদিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়।
এবার দেবী দুর্গা জগতের মঙ্গল কামনায় গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অংশ বিশেষ ঝড় বৃষ্টি হয় এবং শস্য ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে স্বর্গে বিদায় নেন নৌকায় চড়ে। যার ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে।
সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে দর্পণ- বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। পরে রাত ৮টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। প্রথা অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে জল এনে (শান্তিজল) মঙ্গলঘটে নিয়ে তা আবার হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এ শান্তিজল হৃদয় থেকে ঘটে, ঘট থেকে প্রতিমায় রেখে পূজা করা হবে। রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ধ্যা আরতির পর মিশনের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। এরপর ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করেন ও মিষ্টিমুখ করেন।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে গেলেন স্বর্গলোকের কৈলাসে স্বামীর ঘরে। পরের বছর শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে যা তার বাবার গৃহ। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকের বাদ্য আর গান-বাজনার পাশাপাশি বিদায়ের করুণ ছায়ায় সারিবদ্ধভাবে একে একে শহরের নতুন ব্রীজ এর ঘাঘট নদীতে বিসর্জন দেয়া হয় প্রতিমা। গাইবান্ধা শহরের প্রায় ২১ টির মত মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় এই ঘাটে। সড়কে পুলিশের টহল এর পাশাপাশি মন্ডব ও নদীতেও ছিল পুলিশের উপস্থিতি।
সঞ্জয় সাহা: