হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। পূজা উদযাপনে সারাদেশের ন্যায় গাইবান্ধায় চলছে পুরোদমে প্রতিমা ও পূজা মণ্ডপ তৈরির কাজ। পুজার দিন ঘনিয়ে আসায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। মহালয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো পুজার দিনক্ষণ।
গাইবান্ধা সদরে ১শ টি, এর মধ্যে পৌরসভার নিদিষ্ট এলাকায় ২১টি, সাদুল্লাপুরে ১০৭ টি, এর মধ্যে সাদুল্যাপুর উপজেলা শহরে ৫টি, পলাশবাড়ী উপজেলায় ১২৫টি, সাঘাটা উপজেলায় ৬০ টি সহ জেলায় এবার মোট ৬শ৫ টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। এখন বেশির ভাগ মণ্ডপে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। রং তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে মূর্ত করে তোলার চেষ্টায় প্রতিমা শিল্পীরা।
গাইবান্ধা শহর ও সাদুল্যাপুর উপজেলার বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, দূর্গাপূজা উৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে চলছে ব্যাপক সাজসজ্জার প্রস্তুতি। প্রতিটি পূজা মণ্ডপের জন্য তৈরি হয়েছে দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গনেশ, অসুর, সিংহ, হাস, পেঁচা, সাপসহ বিভিন্ন ধরণের প্রতিমা। ইতিমধ্যে অনেক মণ্ডপে শুরু হয়েছে প্রতিমা রঙ করার কাজও।
এছাড়াও বৃষ্টির হাত থেকে প্রতিমা বাচাতে অস্থায়ী পুজা মন্ডবগুলোতে টিনের ছাউনি তৈরি করা হয়েছে।
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার কেন্দ্রীয় বারোয়ারি মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত সদর উপজেলার তুলশীঘাট এর শিবপুর এলাকার “মৃৎশিল্পী শ্রীমান চন্দ্র পাল” প্রতিমা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সব কাজ শেষ এখন শুধু তিনি রঙ দিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন কাজে রং তুলির কাজ করছেন। তিনি এবার প্রায় গাইবান্ধা সদর ও সাদুল্যাপুর উপজেলা সহ মোট ১১টি মন্দির ও পুজা মন্ডবে প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন। প্রতিটি পুজা মন্ডবে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মজুরির চুক্তিতে কাজ করছেন। এতে খরচ বাদে পৃথক পৃথক প্রতিটা পুজা মন্ডবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হবে।
তিনি জানান- এই প্রতিমা তৈরি তার প্রধান কাজ। বিভিন্ন দিনক্ষনে বিভিন্ন পুজায় তিনি প্রতিমা তৈরি করেন। আর এই উপার্জনের অর্থ দিয়ে তিনি নিজ, দুই শিশু সন্তান, স্ত্রী, বাবা-মা সহ পরিবারের ৬ জন সদস্যের অন্ন ও চাহিদা জুটান।
সাদুল্যাপুর কেন্দ্রীয় বারোয়ারি মন্দিরের সদস্য ও উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এর সাধারন সম্পাদক বিবেকানন্দ সরকার এই প্রতিবেদক কে জানান- দুর্গাপূজা উদযাপন ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ’ দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
“সাদুল্যাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ দিলীপ কুমার রায়” বলেন, ‘প্রতিমা তৈরি, পূজা উদযাপন এবং প্রতিমা বিসর্জনসহ দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক ও সজাগ রয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি পুলিশ টহল জোরদার থাকবে।
“গাইবান্ধা পুলিশ সুপার ” মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম” বলেন- হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব যাতে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এ জন্য মন্দিরগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। মন্দির কমিটির লোকদের সাথে কথা বলেছি। তারা যেন গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেন। সে সাথে মন্দিরগুলোতে তাদের নির্দিষ্ট ভলান্টিয়ার থাকবে পাশাপাশি পাশাপাশি পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। পেট্রোল টিম থাকবে এবং অঅন্যান্য যে আইনশৃঙ্খলার সংস্থা রয়েছে তারাও নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ডিউটিরত অবস্থায় থাকবে। শান্তিপুর্ন পরিবেশে যেন দুর্গোৎসব পালিত হয় সে জন্য যথাযথভাবে কর্তব্য পালন হয় সে বিষয়ে কাজ করছি। উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী মন্দিরগুলোতে সার্বক্ষনিক আইনশৃঙ্খলার সদস্য থাকবে। যেসব গুরুত্বপূর্ন মন্দির ও পুজা মন্ডবে লোক সমাগম বেশি থাকবে সেসব স্থানে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। ভালভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে পুজা পালিত হোক।
অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ মন্দিরের বিষয়ে কথা বললে তিনি আরও জানান- আমরা প্রতিটি মন্দিরকে গুরুত্বসহকারে দেখি। যাতে কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে সেজন্য পূজা কমিটির লোকদের সাথে কথা বলে তাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছি।
বিডি গাইবান্ধা/