গাইবান্ধা শহর সহ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একদিকে বেড়েছে মাদক কেনা বিক্রির হিড়িক। অন্যদিকে আশংকাজনক হারে বেড়েছে চুরি ও ছিনতাই। এনিয়ে একাধিক জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা, অনলাইনে ও ফেসবুকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু মাদক ক্রেতা বিক্রেতাদের গ্রেফতার ও চোর চক্রের বিরুদ্ধে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সহ সদর থানা পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বহীনতায় অভিযান কিংবা আটকের উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ না থাকায় কিছুতেই থামছে না মাদক কেনাবেচা ও চুরির ঘটনা। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। শহরের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় প্রতিদিনই ঘটছে একাধিক চুরির ঘটনা।
এরই ধারাবাহিকতায় গাইবান্ধা শহরের পুরাতন ব্রীজরোডস্থ মিস্ত্রী পাড়ার বাসিন্দা এশিয়ান টেলিভিশন ও দৈনিক নয়া শতাব্দীর প্রতিনিধি সাংবাদিক মাসুম লুমেন এর বাড়ির একই কক্ষ থেকে বিগত ৬ মাসে ৪টি চুরির ঘটনা ঘটে। যারমধ্যে সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, লোগো সংযুক্ত দুটো ভিডিও ক্যামেরা, সাথে এন্ড্রয়েড ফোন চুরি হয়।
জানা গেছে, সাংবাদিক মাসুম লুমেন যখন পুলিশের কাছে প্রথমবার অভিযোগ করেন তার কিছুদিন পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগ এর কাগজ হারিয়ে ফেলায় তা খুঁজেই পাচ্ছেন না!।
এর ১৫ দিনের মাথায় আবার তার বাড়ি থেকে নতুন করে ক্রয় করা ক্যামেরার ব্যাগে রাখা ক্যামেরা এবং এন্ড্রয়েড ফোন রহস্যজনকভাবে সন্ধ্যাকালীন সময় চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র। এরপর সদর থানায় আবারও চুরির অভিযোগ দিতে গেলে সেটা তারা জিডি আকারে গ্রহন করেন। এবার ওই ঘরে মোবাইল, ক্যামেরা না রাখায় শুরু হয় মানিব্যাগ থেকে টাকা চুরির ঘটনা। অভিযোগের একমাস পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরপর দুটো মোবাইল এবং ভিডিও ক্যামেরা চুরি করা চোরকে সনাক্ত করে পুলিশ।
আশ্চর্যের বিষয়, দ্বিতীয়বার চুরি করা ‘রিয়েল মি’ ব্র্যান্ডের মোবাইলটি চোর তার চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে যায় এবং ‘স্যামসাং’ ব্র্যান্ডের অপর মোবাইলটি চোর ফেরত দেওয়ার জন্য ওই কর্মকর্তাকে ফোনে অনুরোধ জানান। কিন্তু এই চোর দু’জনকে সনাক্তকরণের ৭দিন অতিবাহিত হলেও সময় এর অভাবে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক নুরুজ্জামান সরকার ফোন উদ্ধারের পাশাপাশি চোরকে গ্রেফতার করেননি।
এরইমধ্যে গত ২৭আগস্ট শনিবার ৫৭ হাজার টাকা ওই একই ঘরের ওয়ারড্রব থেকে ভোরের কোন এক সময় চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র। সাংবাদিকের বাড়ি পরপর চার দফা চুরির ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত চোরকে গ্রেফতার এবং খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধার না করায় গাইবান্ধার সাংবাদিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে।
এ ঘটনায় গাইবান্ধা জেলা বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক মঞ্চের সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চোর সনাক্তের পরেও চোরকে গ্রেফতার না করাটা সত্যিই দুঃখজনক। মোবাইল, ক্যামেরা প্রয়োজনীয় জিনিস। ওই চোরকেও চেনা প্রয়োজন? তাছাড়া এটা রাস্তাঘাটে হারিয়ে যাওয়া মোবাইল নয় যে পেলেই ভোক্তা খুশি। এটা সাংবাদিকের জীবন জীবিকা ধ্বংসকারী চোর। এই চোরকে গ্রেফতার পূর্বক ঘটনার পূণরাবৃত্তি না করাটা অনেক বেশি জরুরি। এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে চোর ছাড়া ফোন রিসিভ করে নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি।
গাইবান্ধা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক ও এই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা নুরুজ্জামান সরকার বলেন, দ্বিতীয় বারের চুরি যাওয়া ক্যামেরা, চার্জার এবং মোবাইল ফোনের মধ্যে চোর তার চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে শুধু মোবাইল ফেরত দিয়েছেন। তিনি আগামী মাসে পরীক্ষা শেষ হলে দেখা করবে!। প্রথমবার ক্যামেরা, মোবাইল চুরি করা চোর চক্রের আরেক সদস্য থানায় আসতে রাজি হননি। কিন্তু মোবাইল ফেরত দেওয়ার জন্য তিনি তার এলাকায় যেতে বলছেন। সময় পেলে আগামী মাসের ১ তারিখের পর মোবাইল, ক্যামেরা উদ্ধারের পাশাপাশি চোরকে গ্রেফতার করবেন বলেও তিনি জানান।
‘সময়ের এক ফোঁর, অসময়ের দশ ফোঁর’ জনগণের জানমাল হেফাজতের দায়িত্বে থাকা একজন ব্যক্তির এমন অবহেলায় ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিকের বড় ধরনের ক্ষতি হলো আরেকবার। এখানে প্রশ্ন থাকে যে তাহলে পুলিশও কি চোর চক্রের সাথে জড়িত? যদি চোরকে ৭দিন আগেই গ্রেফতার করা যেতো, তখন হয়তো এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না। এমনটাই মনে করছেন গাইবান্ধার সচেতন মহল।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী ও ক্ষতির স্বীকার সাংবাদিক মাসুম লুমেন বিডি গাইবান্ধা ও দৈনিক নতুন দিন কে জানান- এ জন্য তিনি সদর থানার ওসি মাসুদুর রহমান ও পুলিশ পরিদর্শক এবং এই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা নুরুজ্জামান সরকারের দায়িত্বহীনতাকে দায়ি করছেন। কেননা পুলিশ যদি সঠিক সময়ে গুরুত্ব সহকারে বিষয়টা দেখত ও চোর চক্রকে গ্রেফতার করত তাহলে বার বার চুরির এই ঘটনা ঘটত না। তিনি আরও বলেন- ‘আমি হতাশ, বিরক্ত এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। পুলিশ আসামি গ্রেফতার করলে হয়তো সব চুরির রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব’।
এ ঘটনায় পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকের বাড়ি থেকে বারবার চুরির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। অনেকদুর অগ্রসর হয়েছি। ওসি সদরকে বলা হয়েছে। তিনি দ্রুতই চোরকে গ্রেফতার পূর্বক হারানো মালামাল ফেরত দিতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
বিডি গাইবান্ধা/ সঞ্জয় সাহা