সিরিজ বোমা হামলার আজ ১৭ বছর। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বিএনপি জামাত জোট সরকারের শাসম কালে এই সিরিজ বোমা হামলা সংঘটিত হয়। সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী যুবলীগ ১৭ আগস্ট ২০২২ (বুধবার) বিক্ষোপ সমাবেশ ও কালো পতাকা প্রদর্শনের আয়োজন করে। বিক্ষোপ সমাবেশ দুপুর ২:৩০ ঘটিকায় সাদুল্লাপুর শহীদ মিনার চত্ত্বর থেকে বের হয়ে, সাদুল্লাপুর মাদারগঞ্জ রোড দিয়ে আবু তালেব চত্ত্বর প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনার চত্ত্বরে এসে সমাবেশ শেষ হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণকারী সকলেই কালো পতাকা প্রদর্শন করেন । এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রভাষক আব্দুল জলিল সরকার,সাধারণ সম্পাদক, শহিদল্ল্যাহেল কবির ফারুক,সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু সাআদাত শাহ মোঃ ফজলুল হক রানা,সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হাবীব বাবু, তথ্য ও প্রযুক্তি গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, জাতীয় শ্রমীক লীগের সভাপতি, বিভাষ চন্দ্র সরকার, সাধারণ সম্পাদক, রুহুল আমিন সরকার জুয়েল,সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি,এশরাফুল কবীর আরিফ,সাধারণ সম্পাদক, আসলাম হোসেন নান্নু, সাদুল্লাপুর উপজেলা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক,তালুকদার জাহিদুল ইসলাম,প্রচার সম্পাদক, মোস্তফা কামাল মোস্তফা, বনগ্রাম ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা, আরিফ মন্ডল,সদস্য,ফজলে রাব্বী প্লাবন,সাদুল্লাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রিপন, এছাড়া ১১ ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতা কর্মী অংশ নেয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রভাষক আব্দুল জলিল সরকার বলেন,আজকের এই দিনে তৃণমূল থেকে নেতা কর্মী উপস্থিত হয়ে এই বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করার মানে সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী এখন আরো শক্তিশালী।
সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ সর্বদা শক্তিশালী। আমরা বিএনপি জামাত দেখে রাজ পথ ছাড়তে রাজি না। সাদুল্লাপুর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ পূর্বে যে ভাবে ভূমিকা রেখেছে সে ভাবে ভবিষ্যতের জন্যেও প্রস্তুত।
সাদুল্লাপুর উপজেলা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক,তালুকদার জাহিদুল ইসলাম বিডি গাইবান্ধা ডট নিউজ কে বলেন, আওয়ামী লীগ যখন সরকার ছিলো না তখনো আমরা রাজপথ ছেড়ে ঘরে ছিলাম না। আওয়ামী লীগ জানে কিভাবে বিএনপি জামাত কে প্রতিহত করতে হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের একটি জঙ্গী সংগঠন পরিকল্পিতভাবে দেশের ৬৩ জেলায় একই সময়ে বোমা হামলা চালায়।
মুন্সীগঞ্জ ছাড়া সব জেলায় প্রায় ৫শ’ পয়েন্টে বোমা হামলায় দু’জন নিহত ও অন্তত ১০৪ জন আহত হন।
পুলিশ সদর দফতর ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ি, ঘটনার পরপরই সারাদেশে ১৫৯টি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে ডিএমপিতে ১৮টি, সিএমপিতে ৮টি, আরএমপিতে ৪টি, কেএমপিতে ৩টি, বিএমপিতে ১২টি, এসএমপিতে ১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১টি, রাজশাহী রেঞ্জে ৭টি, খুলনা রেঞ্জে ২৩টি, বরিশাল রেঞ্জে ৭টি, সিলেট রেঞ্জে ১৬টি, রংপুর রেঞ্জে ৮টি, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৬টি ও রেলওয়ে রেঞ্জে ৩টি। যারমধ্যে ১৪২টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বাকি ১৭টি মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়। এসব মামলায় এজাহারভূক্ত আসামি ছিল ১৩০ জন। গ্রেফতার করা হয় ৯৬১ জনকে। ১ হাজার ৭২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
পুলিশ জানায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে ১৫৯টি মামলার মধ্যে ৯৪টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এসব মামলায় ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এখন ৫৫টি মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। যার আসামি সংখ্যা হচ্ছে ৩৮৬ জন। এই সিরিজ বোমা হামলার রায় প্রদান করা মামলাগুলোর ৩৪৯ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২৭ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়া হয়। এরমধ্যে ৮ জনের ফাঁসি ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।
এসব মামলায় খালাস পেয়েছে ৩৫৮ জন, আর জামিনে রয়েছে ১৩৩ জন আসামি। এছাড়া ঢাকায় বিচারাধীন ৫টি মামলা সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
ঝালকাঠি জেলার দুই বিচারককে হত্যার জন্য ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ ছয় জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি,চিন্তাবিদ আব্দুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ এবং সালাউদ্দিনকে ফাঁসি দেয়া হয়।
বিএনপি জামায়াতের শাসন আমল (২০০১ থেকে ২০০৬) এ সরকারি এমপি মন্ত্রীদের সরাসরি মদদে সারাদেশে শক্ত অবস্থান তৈরি করে জঙ্গিরা।
২০০৫ সালের পরবর্তী সময়ে কয়েকটি ধারাবাহিক বোমা হামলায় বিচারক ও আইনজীবীসহ ৩০ জন নিহত হন। আহত হন ৪ শতাধিক। ওই বছরের ৩ অক্টোবরে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর এবং লক্ষীপুরের আদালতে জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে তিনজন নিহত এবং বিচারকসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন।
এর কয়েকদিন পর সিলেটে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামীর ওপর বোমা হামলার ঘটনায় তিনি এবং তার গাড়িচালক আহত হন। ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় আত্মঘাতি জঙ্গিরা। এতে নিহত হন ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের বিচারক জগন্নাথ পাড়ে এবং সোহেল আহম্মদ। এই হামলায় আহত হন অনেক মানুষ।
সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ২৯ নভেম্বর গাজীপুর বার সমিতির লাইব্রেরি এবং চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে। গাজীপুর বার লাইব্রেরিতে আইনজীবীর পোশাকে প্রবেশ করে আত্মঘাতি এক জঙ্গি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এই হামলায় আইজনজীবীসহ ১০ জন নিহত হন। আত্মঘাতি হামলাকারী জঙ্গিও নিহত হয় ।
একই দিন চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে জেএমবির আত্মঘাতি জঙ্গিরা বিষ্ফোরণ ঘটায়। সেখানে রাজিব বড়–য়া নামের এক পুলিশ কনস্টেবল এবং একজন সাধারণ মানুষ নিহত হন। পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত আহত হন ।
১ ডিসেম্বর গাজীপুর ডিসি অফিসের গেটে আবারও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে নিহত হন গাজীপুরের কৃষি কর্মকর্তা আবুল কাশেম। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নেত্রকোনা শহরের বড় পুকুর পাড় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর অফিসের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় আত্মঘাতি জঙ্গিরা। সেখানে স্থানীয় উদীচীর দু’নেতাসহ ৮ জন নিহত হন। শতাধিক আহত হন ।