‘
মানবতার সেবায় নীরবে কাজ করে যাচ্ছে গাইবান্ধার ‘আব্দুল মান্নান মিয়া ফাউন্ডেশন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ফাউন্ডেশনটি সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার দুঃস্থ-অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী, শীতবস্ত্র বিতরণ ও গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করে আসছে। এছাড়া অসহায় মানুষকে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ধমীয় প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন উপকরণ ও নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে এই সংগঠনটি।
আব্দুল মান্নান মিয়া ফাউন্ডেশনটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান মিয়া। তিনি বিআরটিসি, সুন্দরগঞ্জ ডি ডব্লিউ কলেজের প্রভাষক ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। ১৯৫০ সালের ১০ ফেব্রুযারী চণ্ডিপুর ইউনিয়নের চণ্ডিপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয়া আব্দুল মান্নান মিয়া ২০২১ সালের ১৯ জুলাই মারা যান।
প্রয়াত আব্দুল মান্নান মিয়া কর্মজীবনের সাফল্য ও তাকে স্মরণ করে রাখার উদ্দেশ্যে নিজেই প্রতিষ্ঠিত করেন ফাউন্ডেশনটি। বর্তমানে এই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মিয়ার একমাত্র ছেলে প্রকৌশলী মাজাহারুল মান্নান মিয়া। ঢাকার মিরপুর দুই নাম্বার এলাকা থেকে পরিচালিত হলেও এই ফাউন্ডেশনটি সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।
ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রকৌশলী মাজাহারুল মান্নান মিয়া এ প্রতিবেদককে জানান, ছোট থেকে দেখে আসছি বাবা সব সময় মানুষের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠা গড়ে তুলতেও সক্রিয় ছিলেন। বাবার এই সহায়তার ধারাবাহিতা রাখতে তার নামে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনের পক্ষে সম্পূর্ণ নিজের অর্থে মানুষকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করে যাচ্ছি। সব সময়ের জন্য যে কোন মানুষের সহায়তায় এই ফাউন্ডেশনের দরজা খোলা। এখন পর্যন্ত ফাউন্ডেশনে সহায়তা চেয়ে কেউই খালি হাতে ফেরেনি।
প্রকৌশলী মাজাহারুল মান্নান মিয়ার ভাষ্যমতে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার গবীর-অসহায় মানুষের মাঝে প্রতিবছরই শীতবস্ত্র ও ত্রাণ সহায়তা হিসেবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি। অসহায় অনেক পরিবারের জন্য চিকিৎসা সহায়তা এবং নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণসহ নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। এছাড়া স্বাবলম্বী করতে দরিদ্র অনেক পরিবারকে গরু ও ছাগল দিয়েও সহায়তা করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যা, কালবৈশাখী ঝড়, নদী ভাঙন ও শৈত্যপ্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি করোনাকালীন সময়েও অসংখ্য মানুষকে ত্রাণসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছি।
তিনি আরও জানান, শুধু অসহায় মানুষকে সহায়তা নয়। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন এলাকার গরীব-অসহায় পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা বৃত্তিসহ উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ, মাদ্রাসা, লিল্লাহ বর্ডিং, এতিম খানা ও মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে সিমেন্ট, থাই গ্লাস ও টিন দিয়ে সহায়তা করা হয়। এছাড়া ধর্মীয় অনেক প্রতিষ্ঠানে বৈদুতিক সামগ্রীসহ ওয়ারিং, ডিজিটাল ঘড়ি এবং নামাজের জায়নামাজ (চট) দেয়া হয়েছে।
বিশেষ করে এসব সহায়তার চিত্র চোখে পড়বে চন্ডিপুর, কঞ্চিবাড়ি, ছাপরহাটি ও রামজীবন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মসজিদ-মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়তায় এ পর্যন্ত সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ জেলার দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ১৬৭ জন কলেজে ও ৫৭ জন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মাজাহারুল মান্নান মিয়া বলেন, অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করার পাশাপাশি বেকারদের চাকরির ব্যবস্থাসহ নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহায়তার চেষ্টা করেছি। আগামীতেও মানবসেবামূলক কাজে সরব ভূমিকা পালন করবে ফাউন্ডেশনটি। একই সঙ্গে তিনি জেলার এসএসসি ও এইচএসিতে গ্লোডেন জিপিএ ৫ অর্জন করা শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিবছরে সংবর্ধনা দেয়ার কথাও জানান।
নিজের সম্পর্কের প্রকৌশলী মাজাহারুল মান্নান মিয়া জানান, জার্মানী থেকে মাস্টার্সে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জনিযারিং এবং এমএসসি ডিগ্রী অর্জন করি। গত ৮ বছর জার্মানীতে বিভিন্ন নামী-দামী কোম্পানীতে চাকুরী করেছি। বর্তমানে বাবার প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশন ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। আমিই একমাত্র দেশে পুরুষ নির্যাতন নিয়ে কাজ করছি এবং বাংলাদেশ-জামান হেল্প ফর ম্যান নামের সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছি। জীবনের অল্প এই সময়ে বিশ্বের অন্তত ৩২টি দেশ ভ্রমণ করেছি। তবে সবার সেরা আমার দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে বেঁচে থাকতে চাই।
প্রসঙ্গত : আব্দুল মান্নান মিয়া ছিলেন একজন অত্যন্ত ডানপিটে ও ধর্মভীরু আর সৎ চরিত্রের অধিকারী। তার বাবা মৃত ফজরুদ্দিন মুন্সী ছিলেন প্রখ্যাত একজন আলেম এবং মা সেলিনা খাতুন ছিলেন গৃহীনি। চাকরীর পাশাপাশি মরহুম মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান মিয়া ঢাকাস্থ গাইবান্ধা সমিতির সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্ত্রী, চার মেয়ে ও এক ছেলেসহ নাতী-নাতনী রেখে গেছেন। মরহুম আব্দুল মান্নান মিয়াকে স্মরণ রাখতে তার নামে নিজ গ্রামের বাড়ির তিনটি সড়কের নাম করণ করা হয়েছে।