রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ না করার দাবিতে শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ আখচাষি ইউনিয়ন ও কৃষক সংগঠনসমূহের উদ্যোগে গাইবান্ধা শহরের পাবলিক লাইব্রেরি হলে সকাল ১১টায় চিনিকল শ্রমিক ও আখচাষিদের জীবন-জীবিকা রক্ষা, বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল চালুর দাবিতে সারাদেশের চিনিকলে শ্রমিক, আখচাষি ও শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিনিধি সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির আহ্বায়ক আবু হাসান টিপু।
সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কৃষক ক্ষেতমজুর নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা চিনিকলের শ্রমিক ও আখচাষি প্রতিনিধিবৃন্দ।
প্রতিনিধি সভার প্রথম অধিবেশনের পর জেলা শহরে একই দাবিতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ফেস্টুনে সজ্জিত একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। তারপর দুপুরের খাবার গ্রহণ শেষে প্রতিনিধি সভার সমাপনী অধিবেশনের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়।
সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ,এএম ফয়েজ হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বায়ক শামীম ইমাম, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির আহ্বায়ক আবু হাসান টিপু, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলিফ দেওয়ান, শ্রমজীবী সংঘের সভাপতি আব্দুল আলী, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন দুলাল, বাংলাদেশ কৃষক-ক্ষেতজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশ আখচাষি ইউনিয়ন জাতীয় কমিটির সভাপতি আনছার আলী দুলাল প্রমুখ।
অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা তাঁর বক্তব্যে বলেন, “সরকার আমদানি নির্ভর অর্থনীতির দিকে যাত্রা করার মাধ্যমে শিল্প ধ্বংস করে চলেছে। ওরা আধুনিকতা বলতে বোঝে ফ্লাইওভার, সেতু, ঝলমলে শপিং মল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্লান্ট; কিন্তু জাতীয় শ্রমঘন শিল্প পাট, চিনি শিল্প আধুনিকায়ন করছে না। এতে শ্রমিক কৃষক জীবিকা হারিয়ে আদিম জীবনে যাচ্ছে। সমস্তই মুষ্টিমেয় ধনীক শ্রেণির স্বার্থে প্রণীত পরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণকে আড়াল করারই চক্রান্ত মাত্র।”
নেতৃবৃন্দ তাঁদের বক্তব্যে বলেন, “সরকার গত বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি চিনিকল বন্ধ করে সরাসরি প্রায় ১৬ হাজার চিনিকল শ্রমিক, ৫ লাখ আখচাষিসহ প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবিকা ও অপ্রত্যক্ষভবে যুক্ত লাখ লাখ মানুষের স্বাভাবিক জীবনে অনিশ্চয়তার ঘন অন্ধকার নামিয়ে এনেছে। এর মধ্য দিয়ে এই সরকার যে শ্রমিক-মেহনতি মানুষের নয়, বরং পুঁজিপতিগোষ্ঠী-ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর, সেটাই উন্মোচিত হলো। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর পরামর্শে এবং দুর্নীতিকে আড়াল করতেই সরকার একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি কোম্পানির বা দেশি-বিদেশি ব্যক্তিমালিকের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। এর আগে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকেও বন্ধ করেছে। একইভাবে পাটকলের শ্রমিক ও পাটচাষিদের জীবনেরও করুণ দশা।”
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “এযাবত নানাভাবে আমরা সরকারের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো আধুনিকায়ন করে চালুর দাবি জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। কিন্তু এখনও সরকার আশানুরূপ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং দেশি-বিদেশি মালিকদের কাছে পিপিপি’র মাধ্যমে চিনিকলগুলোর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে একপ্রকার বিরাষ্ট্রীয়করণের চক্রান্ত করছে। এর বিরুদ্ধে চিনিকলে শ্রমিক, কর্মচারী, আখচাষি, শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী সর্বোপরি সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
পরিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে চিনিকল রক্ষার আগামী কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান জানিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি টানেন।
বিডি গাইবান্ধা/