দীর্ঘ কাংখিত তিন বছর পরে আবারো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন শ্রমিক নেতা জামিনুর রহমান জামিন । গাইবান্ধা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং- রাজ ১০৭)’র ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি পদে মো. আশরাফুল আলম বাদশা এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মো. জামিনুর রহমান জামিন নির্বাচিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে সদস্যসহ কাযনির্বাহী কমিটির অন্যান্য সকল পদের ফলাফলও ঘোষণা করা হয়।
৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল আটটার দিকে নির্বাচন কমিশনার মনজুর আলম মিঠু এই ফলাফল ঘোষণা করেন। এরআগে শুক্রবার শহরের ডিবি রোডে আসাদুজ্জামান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিভিন্ন পদের ব্যালট আলাদা করা হয়। রাত ৮টা নাগাদ ভোট গণনা শুরু হয়। শনিবার সকাল পর্যন্ত চলে ভোট গণনা। এরপর ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
গাইবান্ধা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং- রাজ ১০৭)’র ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৪৯০ জন। এরমধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ৪ হাজার ২৩৬ জন ভোটার। নির্বাচনে ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের প্রধান ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুর রহমান। এছাড়া সহকারি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মনজুর আলম মিঠু, রফিকুল ইসলাম, মাহমুদুল হক মামুন, শাহজালাল সরকার খোকন, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুর রহমান। নির্বাচন কমিশনার মনজুর আলম মিঠু জানান, অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু-সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় ফলাফল ঘোষণার সময়, তিনি সকল ভোটার, প্রার্থী এবং প্রশাসনরে প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নির্বাচনে মোট ১৭টি পদের বিপরীতে ৫৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এরমধ্যে সভাপতি ১টি পদের বিপরীতে ৩ জন, কার্য্যকরী সভাপতি ১টি পদের বিপরীতে ২ জন, সহসভাপতি ১টি পদের বিপরীতে ৬ জন, সাধারণ সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ২ জন, সহসাধারণ সম্পাদক ২টি পদের বিপরীতে ৪ জন, অর্থ সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ৩ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ৩ জন, সড়ক সম্পাদক ২টি পদের বিপরীতে ৬ জন, দপ্তর সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ২ জন, প্রচার সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ৩ জন, ক্রীড়া ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ৩ জন ও কার্য্যকরী সদস্য ৪টি পদের বিপরীতে ১৬ জন প্রতিদ্বন্দিতা করেন।
সভাপতি পদে মাছ প্রতিকে মো. আশরাফুল আলম বাদশা ২ হাজার ২৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী স্টিয়ারিং প্রতিকে মো. আব্দুর রশিদ সর্দার পেয়েছেন ১ হাজার ৬০২ ভোট। কার্যকরী সভাপতি পদে ফুটবল প্রতিকে মো. ময়নুল হক বি.এ ১ হাজার ৯৭৪ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গোলাপফুল প্রতিকে মো. আমিনুর রহমান আমিন পেয়েছেন ১ হাজার ৬৮২ ভোট। সহ-সভাপতি পদে খেজুরগাছ প্রতিকে মো. আব্দুর রাজ্জাক মিয়া ৮শ’ ২১ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতিকে মো. হায়দার আলী পেয়েছেন ৭শ’ ৯৫ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে হাতুড়ী প্রতিকে ২ হাজার ৩৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. জামিনুর রহমান জামিন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চাবি প্রতিকে এ্যাড. গৌতম কুমার চক্রবর্ততী বিশু পেয়েছেন ১ হাজার ৭৭৩ ভোট।
সহ-সাধারণ সম্পাদক এর ২টি পদে নির্বাচন করেছেন ৪জন প্রার্থী। এরমধ্যে তাজমহল প্রতিকে ২ হাজার ১৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. হাসাবুল হাসান দিনার এবং বাস প্রতিকে মো. শহিদুল আসলাম শহিদ ১ হাজার ৮৩৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাদের নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাচি প্রতিকে মো. রওশন মিয়া পেয়েছেন ১ হাজার ৭০৮ ভোট।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন ৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে পাঞ্জা প্রতিকে ২ হাজার ৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. মশিউর রহমান হীরা। তার নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তলোয়ার প্রতিকে মো. শামীম রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ২৫৮ ভোট।
অর্থ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন ৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে প্লায়ার্স প্রতিকে ১ হাজার ৭২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. হারুন অর রশিদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী একতারা প্রতিকে মো. আমজাদ হোসেন পেয়েছেন ১ হাজার ৬৪৩ ভোট। সড়ক সম্পাদক এর ২টি পদে নির্বাচন করেছেন ৬ জন প্রার্থী। এরমধ্যে টিউবওয়েল প্রতিকে ১ হাজার ৬০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. রফিকুল ইসলাম রফিক এবং ট্রাক প্রতিকে মো. আতিকুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ৫৫৪ ভোট। তাদের নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী টেলিভিশন প্রতিকে মো. জাহেদুল ইসলাম পেয়েছেন ১ হাজার ২৫৭ ভোট। দপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন ২ জন প্রার্থী। এরমধ্যে মাইক প্রতিকে ২ হাজার ২৯২ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন মো. আশরাফুল আলম ফরিদ। তার নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী টিয়াপাখি প্রতিকে মো. রেজাউল করিম রাজু পেয়েছেন ১ হাজার ৩৭৪ ভোট। প্রচার সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন ৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে চেয়ার প্রতিকে ১ হাজার ৪৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. নজরুল ইসলাম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সিলিং ফ্যান প্রতিকে মো. হাফিজার রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ১২৫ ভোট। ক্রীড়া ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন ৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে ক্রিকেট ব্যাট প্রতিকে ১ হাজার ৪১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বাবুল আহম্মেদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বটগাছ প্রতিকে মো. আহসান হাবিব মন্ডল পেয়েছেন ১ হাজার ৩১৬ ভোট।
এছাড়া কার্যকরী সদস্য এর ৪টি পদে লড়াই করেছেন ১৬ জন প্রার্থী। এরমধ্যে গাভি প্রতিকে ১ হাজার ৩৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. আবু তাহের, চশমা প্রতিকে ১ হাজার ২৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. নয়া মিয়া, টায়ার প্রতিকে ১ হাজার ৪৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. সজিব মিয়া, প্রজাপতি প্রতিকে ১ হাজার ৬৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. রাজু মিয়া।
গাইবান্ধা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং- রাজ ১০৭)’র ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনকে ঘিরে গত শুক্রবার সকাল থেকেই শহরের ডিবি রোডে আসাদুজ্জামান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের সামনে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ করা গেছে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। প্রার্থীদের সমর্থকেরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে রাস্তায় আনন্দ উল্লাস করেছেন। রাস্তার দু’পাশে প্রার্থীদের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।ভোটার উপস্থিতি থাকায় উৎসব মুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে । নির্বাচনে নির্বাচিত সভাপতি সম্পাদককে সহ কার্যনির্বাহী কমিটি কে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জেলা রাজনৈতিক ,সামাজিক, পেশাজীবী,সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।